কোন পথে চলবে আরজি কর আন্দোলন। সেই দিশা ঠিক করতে শুক্রবার সিনিয়রদের ফের বৈঠক জুনিয়রদের। কিন্তু এই বৈঠকের আগে আরও একটি বৈঠককে কেন্দ্র করে এই আন্দোলনে জুনিয়র ডাক্তারদের ভবিষ্যৎ-কে কার্যত প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিল। যে বৈঠক নিয়ে এখন তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি। বৈঠক তৃণমূল রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষের সঙ্গে আরজি কর আন্দোলনে সিনিয়র ডাক্তারদের অন্যতম মুখ নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
বৃহস্পতিবার রাতে মধ্য কলকাতার এক সংবাদপত্রের দফতরে কুণাল ঘোষের সঙ্গে দেখা করতে যান কলকাতার অন্যতম সিনিয়র চিকিৎসক নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, তাঁদের মধ্যে প্রায় দু ঘণ্টা কথা হয়েছে। ভিতরে কী কথা হয়েছে, তা বাইরে এসে স্পষ্ট করেননি কেউ-ই। তবে, এই বৈঠকের পর নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, যে জুনিয়র ডাক্তাররা টানা ১৩ দিন অনশন করছেন, তাঁরা সবাই ছেলের মতো। আর সবার সুস্থতা কামনা করতেই এই বৈঠক তিনি করেছেন।
কুণাল ঘোষের সঙ্গে নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বৈঠকের খবর কার্যত স্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়ে কলকাতার বিভিন্ন কোণে। এই খবর যায়, ধর্মতলায় অনশনে বসে থাকা ছয় জুনিয়র ডাক্তারের কাছে। এমনকী, এই বৈঠকের খবর কার্যত হতম্ভব হন আরজি কর আন্দোলনে জুনিয়র ডাক্তারদের অন্যতম দুই নেতা দেবাশিস হালদার এবং কিঞ্জল নন্দও। তাঁদের জন্য কাউকে কিছু করতে হবে না বলে এদিন ফেসবুকে পোস্ট করেছেন জুনিয়র ডাক্তারদের আর এক নেতা আসফক-উল্লাহ-নাইয়্যা।
এরই মধ্যে সোশাল মিডিয়ায় বয়ে যায় সমালোচনার ঝড়। তার মধ্যে পোস্ট করে নায়ারণ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, ভদ্রতা কোনও দুর্বলতা নয়, ভদ্রতা হল মা-বাবার দেওয়া শিক্ষা ! তাতেও চিড়ে ভেজেনি। ততক্ষণে সমালোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে সমাজ মাধ্যমে। প্রশ্ন তোলা হল, কে কাকে ডাকল ? জায়গাই বা কে ঠিক করল ?
কেউ লিখেছেন, চোর আপনার সামনে এল, আপনি কথা বললেন, সেটা ভদ্রতা হতে পারে। কিন্তু আপনি চোরের সঙ্গে কথা বলতে গেলেন, সেটা কোনও ভাবেই ভদ্রতা হতে পারে না। কুণাল ঘোষের সঙ্গে বৈঠকের পর অনেকেই আবার আস্থা হারিয়েছেন নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর। এই প্রবল চাপে আন্দোলনে থাকা জুনিয়র ডাক্তারদের থেকে আস্থা অর্জন করতে নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, এই আন্দোলনে জুনিয়র ডাক্তারদের কেউ বোরে হিসাবে ব্যবহার করছেন।
গত ৯ তারিখ আরজি করের ঘটনার পর থেকেই দু মাসের বেশি সময় কেটে গিয়েছে। গত ১৪ দিন হল, অনশনে ধর্মতলার অস্থায়ী মঞ্চে দিন কাটাচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। রাজনৈতিক মহলের মতে, এই সময়ে তাঁদের দিকে শাসক দলের পক্ষ থেকে যে আক্রমণ উড়ে এসেছে, তার সিংহভাগ ছিল শাসক দলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষের দিক থেকে। কখনও ফেসবুক থেকে আবার কখনও সরাসরি আক্রমণ ধেয়ে এসেছে জুনিয়র ডাক্তারদের দিকে।
এহেন কুণাল ঘোষের সঙ্গে বৈঠক করতে গিয়ে কার্যত ভর্ৎসনার মুখে এখন সিনিয়র চিকিৎসক নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়। নেট নাগরিকদের অভিযোগ, ডেডলক খুলতে এমন একজনকে বেছে নেওয়া হল, যিনি ক্রমাগত জুনিয়র ডাক্তারদের আক্রমণ করেছেন। আবার কেউ দাবি করেছেন, এই বৈঠক সম্পর্কে নিশ্চিত জুনিয়র ডাক্তারদের কাছে খবর ছিল না। এই ঘটনা জুনিয়র ডাক্তারদের অপমান করা হয়েছে বলেও অনেকে মনে করছেন। এই অবস্থায় নিজের যুক্তিতেই অনড় নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
একদিকে নারায়ণ-কুণাল বৈঠক। তা নিয়ে ক্ষুব্ধ চিকিৎসকদের একাংশ। এরমধ্যে শহরের আর এক সিনিয়র চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরীর বিরুদ্ধে সারদা থেকে টাকা তোলার অভিযোগ করেছেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তাঁর অভিযোগ, সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনকে নিয়ে সিপিএমের এক নেতার সঙ্গে দেখা করেছিলেন অভিজিৎ চৌধুরী। এই তথ্য সিবিআইকে জানিয়েছেন বলেও দাবি করেছেন কুণাল ঘোষ।
একদিকে রাজ্যের স্বাস্থ্যকে আরও স্বাস্থ্যবাণ করতে কালীঘাটে স্বাস্থ্য সচিব ও মুখ্য সচিবকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক। অন্যদিকে জুনিয়র ডাক্তারদের নিয়ে জট কাটাতে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের সঙ্গে নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক। এই দুই বৈঠকের পরেও আরজি কর এখনও সেই তিমিরেই। এরমধ্যে নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাদের দলের প্রতিনিধি মানতে অস্বীকার করল সিনিয়র ডাক্তারদের আর এক সংগঠন জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টর্স।
সবমিলিয়ে পরিস্থিতি যা, তাতে ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, চাপ বাড়ল জুনিয়র ডাক্তারদের উপরেই। কারণ, তাঁদের লড়াইকে কে এখন হাইজ্যাক করতে চাইছে, সেই দিকেই তাকিয়ে রয়েছে বাংলার রাজনৈতিক মহল।