অনশন শেষ হয়েছে, আন্দোলন নয়। আর তা জানান দিতে বেশ কয়েকটি সুপারিশ-সহ রাজ্যকে ফের ইমেল করলেন আরজি কর আন্দোলনের জুনিয়র ডাক্তাররা। বৃহস্পতিবার সারারাত জেগে ঘূর্ণিঝড় দানার উপর নজর রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওড়িশা উপকূলে রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ ল্যান্ডফল করছে এই ঘূর্ণিঝড়। আর ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট-এর তরফে রাজ্যে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে ইমেল পাঠানো হয় রাত বারোটার কিছু পরে। মূলত, রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলির উন্নতি নিয়ে এই মেল-বার্তায় কিছু পরামর্শ দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
শনিবার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁরা গণ-কনভেনশন করবেন। তার আগে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে ইমেল করে কী লিখলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁরা লিখেছেন, এই সময়ে নিশ্চই ঘূর্ণিঝড় দানার মোকাবিলায় ব্যস্ত রয়েছেন মুখ্যসচিব। তাঁরাও প্রস্তুত। এর পাশাপাশি তাঁরা উল্লেখ করেন গত ২১ অক্টোবর বৈঠকে আলোচনা ভিত্তিতে উঠে আসা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে লিখতে তাঁরা বাধ্য হচ্ছেন। স্বাস্থ্যের উন্নতিতে কয়েকটি দিকে জোর দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
মুখ্যসচিবকে ইমেল করার পাশাপাশি শনিবার গণ-কনভেনশনের আগে রাজ্য সরকারকে হাসপাতালের কাজের উন্নতি সম্পর্কে ছটি সুপারিশও পাঠিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। কী সেই ছটি সুপারিশ ?
বেড খালির বিষয়টি কেন্দ্রীয় ভাবে নজরদারি করতে হবে। কারণ, এই ইস্যুতে রাজ্যের পাইলট প্রজেক্টে খুশি নন জুনিয়র ডাক্তারার। তাই এক মাসের মধ্যে এই ব্যবস্থা চালুর দাবি করা হয়েছে। দুর্নীতি রুখতে এবং হুমকি সংস্কৃতি বন্ধ করতে প্রতি ঘণ্টায় সমস্ত সরকারি হাসপাতালে খালি বেডের সংখ্যা জানানোর দাবি করা হয়েছে। জুনিয়র ডাক্তাররা মনে করেন, এই ব্যবস্থায় সরকারি হাসপাতালের কাজ আরও মসৃণ হবে। যা রোগীর পরিবারকেও সুবিধা দেবে।
বাস্তবে সরকারি হাসপাতালগুলি ঠিক কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে, তা প্রতি ছ মাস অন্তর রাজ্য সরকারকে মূল্যায়ণ করতে হবে। তার উপর ভিত্তি করে বেডের সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জুনিয়র ডাক্তারদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় রেফারেল পদ্ধতিতে খামতি রয়েছে। তাই এক্ষেত্রে রাজ্যের সামনে দুটো শর্ত রেখেছে। এক, রেফার করা রোগীর জন্য পর্যাপ্ত বেড খালি আছে কীনা, তা জানাতে হবে। আর দুই, রেফার করা রোগীদের চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত পরিকাঠামো, ওষুধ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রয়োজন তা ওই হাসপাতালে রয়েছে কীনা। রেফারের ক্ষেত্রে উভয় শর্ত মানার সুপারিশ ওই মেলে করা হয়েছে। জুনিয়র ডাক্তাররা মনে করেন, যে কোনও একটি খামতি থাকলে, রোগীর জন্য বিকল্প পরিষেবার ব্যবস্থা করতে হবে।
এর পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় রেফারেল পদ্ধতি পরিচালনার জন্য প্রয়োজন ডেটাএন্ট্রি অপারেটর। রেফার করা হাসপাতালে কোনও পরিষেবা উপলব্ধ না হলে কোথায় সেই পরিষেবা পাওয়া যেতে পারে সেই সংক্রান্ত তথ্য প্রদানের জন্য বোর্ড টাঙাতে হবে। এর ফলে রোগীর পরিবার বিভ্রান্তি এড়াতে পারবেন।
এই মেল-বার্তায় জুনিয়র ডাক্তাররা জানিয়েছেন, তাঁদের এই সুপারিশ ঐচ্ছিক নয়। রাজ্যের স্বাস্থ্যের উন্নতির স্বার্থে বাধ্যতামূলক। এই ইস্যু গুলি আলোচনার জন্য রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে আলোচনার টেবলে বসার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা।