ওঁরা সাধারণ নিম্নবিত্ত মানুষ। কারও পেশা গাড়ির চালক। কেউ আবার রান্নাবান্না, বাগান দেখাশোনা করেন। আচমকাই একদিন তাঁরা জানতে পারলেন পেশা এক থাকলেও কাগজে-কলমে তাঁরা প্রত্যেকে বিভিন্ন সংস্থার ডিরেক্টর হয়ে গিয়েছেন। কিন্তু কীভাবে হল এমনটা ,তাঁরা নিজেরাই জানেন না।
এসএসসি দুর্নীতি মামলায় ইডি অভিযান শুরু করার পর তোলপাড় হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি। সেই সময়েই সংবাদমাধ্যম মারফত তাঁরা জানতে পারেন, তাঁরাও বিভিন্ন সংস্থার ডিরেক্টর। গত সোমবার প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী এবং তাঁর 'ঘনিষ্ঠ' অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট পেশ করেছে ইডি। সেই চার্জশিটেই এরকমই বহু ব্যক্তির বয়ান তুলে ধরা হয়েছে।
চার্জশিটে কল্যাণ ধর নামে এক ব্যক্তির বয়ান তুলে ধরেছে ইডি। ওই ব্যক্তির শ্যালিকা অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। ইডির দাবি, কল্যাণ জানিয়েছেন, তাঁকে অর্পিতা গাড়ির চালক হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন। কিন্তু তিনি জানতেন না অর্পিতার সঙ্গে তাঁকেও যে ‘ইচ্ছে এন্টারটেনমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড’, ‘সেন্ট্রি ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেড’ এবং ‘সিম্বায়োসিস মার্চেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড’-এর ডিরেক্টর বানানো হয়েছে। অর্পিতার নির্দেশে না-পড়েই বিভিন্ন নথিতে সই করেছেন তিনি। চার্জশিটে ইডি-র আরও দাবি, ‘অপা ইউটিলিটি সার্ভিস’ সম্পর্কেও তাঁর কিছু জানা নেই বলে জানিয়েছেন কল্যাণ।
চার্জশিট অনুযায়ী, শুধু কল্যাণ নয়। সে ছাড়াও এমন বিভিন্ন ব্যক্তি রয়েছেন, যারা পাচক কিংবা মালি অথবা পিওন। তাঁরাও না পড়ে বিভিন্ন কাগজে সই করতেন। ফলে, নিজেদের অজান্তেই তাঁরা রাতারাতি হয়ে উঠেছিলেন বিভিন্ন সংস্থার ডিরেক্টর।
গত ২২ জুলাই এসএসসি কাণ্ডে পার্থর নাকতলার বাড়িতে হানা দেয় ইডি। প্রায় ২২ ঘন্টা টানা জিজ্ঞাসাবাদের পর সেদিন গভীর রাতে পার্থকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাক্তন মন্ত্রীর থেকেই হদিশ মেলে মডেল-অভিনেত্রী অর্পিতার। এরপর তাঁর টালিগঞ্জের আবাসনে হানা দেয় তদন্তকারী সংস্থা। ওই ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় প্রায় ২২ কোটি টাকা, প্রচুর সোনার গয়না, সোনার বাট, কয়েন। পরে অর্পিতার বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটে মেলে প্রায় ২৮ কোটি টাকা। এরপর ধীরে ধীরে তদন্ত এগোলে আরও বিভিন্ন তথ্য সামনে আসতে থাকে। সেই সব তথ্য এবং পার্থ-অর্পিতার সম্পর্কের নানা দিক লিপিবদ্ধ করেই আদালতে চার্জশিট পেশ করেছে ইডি।