আরজি কর হাসপাতালে ডিউটিরত তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের মামলার শুনানি শুরু হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। রাজ্য সরকার-পুলিশকে তীব্র ভর্ৎসনার পাশাপাশি, আরও একটি বিষয় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। নির্যাতিতার নাম এবং ছবি-ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে এখনও। শীর্ষ আদালতের কড়া নির্দেশ, সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া থেকে যত দ্রুত সম্ভব, নির্যাতিতার নাম, ছবি, ভিডিও মুছে ফেলতে হবে।
সোমবারই এই অভিযোগেই আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে নতুন এফআইআর দায়ের হয়েছে কলকাতা পুলিশে, তিনি বারবার প্রকাশ্যে নির্যাতিতার নাম নিয়েছেন। ডঃ সন্দীপ ঘোষের সেই বক্তব্য টিভিতে লাইভ সম্প্রচারিতও হয়। দিন কয়েক আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় নির্যাতিতার ছবি নাম প্রকাশ করার অভিযোগে পোস্টকারীকে নোটিস পাঠিয়েছিল লালবাজার।
আরজি কর কাণ্ডে প্রবল আন্দোলন ও প্রতিবাদের মুখে পড়ে, পদত্যাগ করতে বাধ্য হন হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। পদত্যাগের সিদ্ধান্ত জানানোর সময়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে নির্যাতিতার নাম বারবার করে উল্লেখ করেন তিনি, সেখান থেকেই তা ছড়িয়ে পড়ে দর্শক-শ্রোতাদের মধ্যে।
এই বিষয়ে ২০১৮ সালে কাঠুয়া ধর্ষণ কাণ্ডে এক নিয়মাবলি পেশ করেন বিচারপতিরা, তাতে উল্লেখ করা হয়,
১)কোনও ভাবেই ছাপার অক্ষরে বা বৈদ্যুতিন মাধ্যমে বা সোশাল মিডিয়ায় নির্যাতিতার নাম প্রকাশ্যে আনা যাবে না বা এমন কোনও তথ্য প্রকাশ করা যাবে না যা থেকে নির্যাতিতার পরিচয় জানতে পারা যায়
২) নির্যাতিতার মৃত্যু হলে বা তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে থাকলেও তাঁর নাম প্রকাশ করা যাবে না। এমনকি তাঁর আত্মীয় পরিজন অনুমতি দিলেও না। একমাত্র কোনও এক বিশেষ পরিস্থিতিতে দায়রা আদালতের বিচারপতি, সেই কাজটি করতে পারেন।
৩) ধর্ষণ বা পসকো আইনের বিবেচ্য কোনও অপরাধ সংক্রান্ত এফআইআর-এর বিষয় বস্তু প্রকাশ্যে আনা যাবে না।
৪) অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস, বা অপর্যাপ্ত ক্ষতিপুরণের বিরুদ্ধে নির্যাতিতা আবেদন করতে চাইলে তাঁর পরিচয় প্রকাশ করার কোনও প্রয়োজন নেই
৫) নির্যাতিতার নাম রয়েছে এমন সব নথি পুলিশকে সিল-করা খামে রাখতে হবে। সেগুলি জনসমক্ষে বা প্রকাশ্যে যাচাই করার প্রয়োজন হলে, পুলিশ নির্যাতিতার নাম মুছে তবেই নথির প্রতিলিপি পেশ করতে পারবে।
৬) কর্তৃপক্ষ নির্যাতিতার পরিচয় জানলে, গোপন রাখতে হবে
৭) পসকো কোর্টের আওতায় থাকা কোনও নাবালক/নাবালিকার নির্যাতনের ক্ষেত্রে, বিশেষ আদালত একমাত্র তার স্বার্থ রক্ষার্থে তার নাম প্রকাশের অনুমতি দিতে পারে।
৮ সরকার নতুন আইন না আনা পর্যন্ত, মৃত বা মানসিক ভারসাম্যহীন নির্যাতিতার পরিচয় প্রকাশ্যে আনার জন্য যদি তাঁর নিকট আত্মীয়রা আবেদন করেন, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন দায়রা বিচারপতি।