তৃণমূল সরকারের হেলথ স্কিম স্বাস্থ্যসাথী। চিকিৎসা ক্ষেত্রে রাজ্যের বহু মানুষের ভরসা এই স্কিম। সেই স্বাস্থ্যসাথী নিয়ে এবার নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত। সরকারের খবর, বেশ কিছু অসাধু হাসপাতাল, নার্সিংহোম, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প থেকে টাকা আত্মসাৎ করার চেষ্টা করছে। সেই সব নার্সিংহোমে চুরি ঠেকাতে একগুচ্ছে নতুন নিয়ম জারি করেছে রাজ্য সরকার। প্রত্যেক স্বাস্থ্য়সাথী কার্ডে থাকবে জিও ট্যাগিং।
এবার স্বাস্থ্যসাথী ব্যবহার করে যারা চিকিৎসা নেবেন, হাসপাতালকে একটি নির্দিষ্ট অ্য়াপের সাহায্য়ে সেই রোগীর ছবি ও ভিডিয়ো তুলে পাঠাতে হবে। ভর্তি, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, অপারেশনের আগে ও পরে, ডিসচার্জের সময় ছবি পাঠাতে হবে হাসপাতালকে। স্বাস্থ্যসাথীতে রোগী ভর্তি হলেই সেই তথ্য স্বাস্থ্য়ভবনকে পাঠাতেই হবে। অর্থাৎ প্রত্যেক ধাপে রোগী হাসপাতালে আছে কিনা, তার জিপিএস লোকেশনও সরকারের নির্দিষ্ট সার্ভারে পাঠাতে হবে। এই পদ্ধতিকেই বলছে জিও ট্যাগিং।
স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে জালিয়াতি এড়ানোর জন্য রোগীর ছবি, ভিডিয়ো, জিপিএস লোকেশন একবার পাঠানোর পর তা এডিট করা যাবে না। হাসপাতালকেই সব কিছু করতে হবে। একই স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে ডায়ালিসিস, কেমোথেরাপি ও অন্যান্য় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করালেও একই নিয়ম মেনে চলতে হবে। পুরো প্রযুক্তি সম্পর্কে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষগুলিতে নির্দেশ দেবে স্বাস্থ্যভবন। রিয়েল টাইম ডেটা মিলছে কিনা, তা দেখার জন্য রোগী ভর্তি হলেই ফোনের জিপিএস বা জিও অন করে দিতে হবে। পরীক্ষা শুরু হওয়ার পরই ফোনের জিপিএস অন করতে হবে। স্বাস্থ্যভবনের পক্ষ থেকে যে নির্দিষ্ট অ্য়াপ দেওয়া হবে, তা চালাতে হবে। পরীক্ষা শেষ হলে জিপিএস অন করে অ্যাপ বন্ধ করতে হবে।
যে অ্যাপ দেওয়া হবে, তা হাসপাতালের ৫০ মিটার ব্যাসার্ধের বাইরে কাজ করবে না। অর্থাৎ রোগী যে হাসপাতালে ভর্তি হবে, তা নিশ্চিত করবে জিপিএস লোকেশন। সার্ভারে আপলোড করা ছবি বা ভিডিয়ো জাল কিনা, তা পরীক্ষা করবে AI। রোগীর ছবি না থাকলে বা ভিয়ো তথ্য আপলোড করলে সরকার স্বাস্থ্যসাথীর টাকা মেটাবে না। নার্সিংহোম বা হাসপাতালের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মোটা টাকা জরিমানাও করা হতে পারে।
কীভাবে আবেদন করবেন স্বাস্থ্যসাথী কার্ড
২০১৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর স্বাস্থ্যসাথী কার্ড প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই কার্ডের মাধ্যমে একাধিক জটিল রোগের চিকিৎসা করা হয়। প্রত্যেক পরিবার সদস্য পিছু ৫ লক্ষ টাকা করে স্বাস্থ্যবিমা দেয় রাজ্য সরকার।
দুয়ারে সরকার ক্যাম্প থেকে এই সুবিধা পাওয়া যায়। অনলাইনেও আবেদন করা যায়। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট swasthyasathi.gov.in-এ গিয়ে আবেদন করা যাবে। হোমপেজে গিয়ে অ্য়াপ্লাই অনলাইন অপশনে গিয়ে নতুন পেজ খুলে যাবে। মোবাইল নম্বর দিয়ে GET OTP বাটনে ক্লিক করলেই একটা একটা নতুন পেজ খুলে যাবে। মোবাইলে আসা OTP লিখে সাবমিট করতে হবে। সেখানে যে সমস্ত তথ্য চাওয়া হবে, তা দিয়ে আবেদন করতে হবে।
অনলাইনে আবেদনকারীকে নিজের নাম, আধার কার্ডের নম্বর, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর ও বায়োমেট্রিক তথ্য দিয়ে ফর্ম ফিল-আপ করতে হবে। আবেদনপত্রের ওপরের ডান দিকে পরিবারের যে মহিলা সদস্যের নামে কার্ড করানো হচ্ছে, তাঁর স্বাক্ষর নিতে হবে। আবেদনকারী ব্যক্তির খাদ্যসাথী কার্ড থাকলে, তা উল্লেখ করতে হবে। তবে যদি পরিবারে কোনও মহিলা সদস্য না থাকলে, পুরুষ সদস্যের নামেই স্বাস্থ্যসাথী কার্ড হবে।