‘অনেক তো দিন গেল বৃথা এ সংশয়ে, এসো এবার দ্বিধার বাধা পার হয়ে’
স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে, রাতের দখল নেবে মেয়েরা। ১৪ অগাস্ট এই ডাকে বাংলার কোণে কোণে মেয়েরা পথে নামছে, তাও রাত ১১ টায়। স্বাধীনতার মধ্যরাতে, নারী স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন বাংলার মেয়েরা। আর এই এই বিক্ষোভের আঁচ ছড়িয়ে পড়েছে প্রায় গোটা দেশেই। আরজি করে ডাক্তারি ছাত্রীর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার বিচার চেয়ে রাত দখলের ডাক দেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। এর নেপথ্যে ছিল, আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের একটি বিতর্কিত বক্তব্য।
আরজি করে ছাত্রী মৃত্যুর ঘটনার পর একাধিক অভিযোগ উঠছে তাঁর বিরুদ্ধে। ঘটনার পরে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, রাতে সেমিনার হলে একা শুতে যাওয়া ওই নিহত ছাত্রীর ঠিক হয়নি। তাঁর এই মন্তব্যের পরেই ফুঁসে উঠেছিল সকলেই। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ‘ভিক্টিম ব্লেমিং’-এর অভিযোগ তুলে নারীদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা নিয়ে আওয়াজ তুলেছিলেন ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে মহিলারা।
রিমঝিমের রাত দখলের ডাক:
‘প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী রিমঝিম সিনহা এর বিরুদ্ধে, একটি পোস্ট দিয়ে লেখেন , ‘আমি রিমঝিম সিনহা। আমি শুনলাম আর.জি.কর-এর প্রিন্সিপাল বলেছে, রাতে মেয়েটির একা ওদিকে যাওয়া ঠিক হয়নি। রাতে একা থাকা ঠিক হয়নি। আমি রাতেই থাকবো। ১৪ই অগাস্ট রাত ১১.৫৯ নাগাদ স্বাধীনতার, আমার নারী স্বাধীনতার জন্য রাতে বাইরে থাকবো। গান গাইবো-গান শুনবো-আড্ডা দেবো। যা ইচ্ছে তাই করবো।
"রাত মেয়েদের জন্য সেফ নয়"
"পোষাক সেফ নয়"
"মেয়েটির চরিত্র ঠিক নয়", এসব আর শুনতে বাধ্য নই। সারারাত বাইরে থাকবো।
যারা থাকতে চান, কমেন্টে জানান।’
তাঁর এই ডাকেই কার্যত একটি ঐতিহাসিক রাতের রূপরেখা তৈরি হয়ে যায়। দিকে দিকে দাবানলের গতিতে , ‘রাত দখলের’ পোস্ট ছড়িয়ে যেতে শুরু করে। সেলিব্রিটি থেকে সাধারণ মানুষ, সমস্ত স্তরের মেয়েরা মহিলারা স্বতঃফূর্তভাবে পথে নামার সিদ্ধান্ত নেন।
কোথায় কোথায় জমায়েত:
বাংলায় ইতিমধ্যেই প্রায় শতাধিক জায়গায় জমায়েতের ডাক দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও মুম্বই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু সহ দেশের একাধিক জায়গায় স্বাধীনতার মধ্যরাতে রাস্তা দখল করবে মেয়েরা।
কোন কোন দাবিতে, মেয়েরা পথে?
মোট ১১ দফা দাবিতে আজ রাস্তায় নামবেন সমস্ত স্তরের মহিলারা।
১.আরজি করের ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্ত করতে হবে
২. তদন্ত দ্রুত শেষ করে, তার রিপোর্ট জনগণের সামনে প্রকাশ করতে হবে
৩. দোষীদের দৃষ্টন্তমূলক শাস্তি দিতে হবে
৪. অপসৃত অধ্যক্ষকে কেবল বদলি নয়, অপসারণ করতে হবে।
৫. প্রয়োজনে অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে, তাঁর ভূমিকার তদন্ত করতে হবে।
৬. সংগঠিত ও অসংগঠিত ক্ষেত্রে নারী সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
৭. ভিকটিম ব্লেমিংকে আইনের আওয়তায় নিতে হবে
৮. মেয়েদের যাতায়াতের স্থানকাল, সময় নির্ধারণ না করে তাঁদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
৯. সব ক্ষেত্রে সক্রিয় আইসিসি করতে হবে
১০. প্রমাণ লোপাটে যুক্ত প্রত্যেককে শাস্তি দিতে হবে
১১. সমস্ত কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের ব্যবহারযোগ্য পৃথক শৌচালয় দিতে হবে।
রাত দখলের তারা-রা…
এই ঐতিহাসিক রাতের সাক্ষী থাকতে পথে নামছেন অসংখ্য তারারা। নারকীয় ধর্ষণ এবং খুনের শাস্তির দাবিতে এদিন রাজপথের রাত দখল কর্মসূচিতে পা মেলাবেন, সৌরসেনী, ইমন, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, শ্রীলেখা মিত্র, ঋতাভরী চক্রবর্তী, সুদীপ্তা চক্রবর্তী থেকে শুরু করে আরও অনেক বিশিষ্টজনেরা।
ওলা উবের সার্ভিস:
মেয়েরা রাতে বেরিয়ে ফিরবেন কীভাবে এই নিয়ে একটা সংশয় তৈরি হয়েছিল। কিন্তু, ওলা উবের সহ আরও কয়েকটি অ্যাপ ক্যাব ১৪ তারিখ সারা রাত পরিষেবা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বহু পুরুষ বন্ধুরাও এই আন্দোলনে পা মেলাবেন, কেউ কেউ এই আন্দোলনকে পূর্ণ সমর্থন করে জানিয়েছেন, আজকের রাতটা মেয়েদের একা ছেড়ে দিতে। অধিকার বুঝে নেওয়ার দাবিতে সামিল হতে ইতিমধ্যেই সাজছে গোটা দেশ। প্রস্তুত হচ্ছেন সমস্ত স্তরের মহিলারা।