প্রায় ২২ কোটি! সঠিক হিসেব ২১ কোটি ৯০ লক্ষ! এই বিপুল অংকের টাকা উদ্ধার হয়েছে এসএসসিকাণ্ডে অভিযুক্ত প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের দক্ষিণ কলকাতার ফ্ল্যাট থেকে। সঙ্গে কয়েক লক্ষ বিদেশি মুদ্রাও উদ্ধার হয়েছে। তদন্তে নেমে উদ্ধার হওয়া বিপুল এই অর্থ ট্রাঙ্ক ভর্তি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কোথায় নিয়ে যাওয়া হল, এখন কোথায় কতদিন কীভাবে পড়ে থাকবে সেই টাকা?
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছে উদ্ধার হওয়া নগদ টাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ভল্টে রাখা হয়েছে। আদালতে যদি প্রমাণ হয়, শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতি থেকেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাত ঘুরে অর্পিতার কাছে এই অর্থ এসেছে, সে ক্ষেত্রে নগদ টাকা পাকাপাকি বাজেয়াপ্ত করে তা কেন্দ্রীয় সরকারের রাজকোষে জমা হবে।
কিন্তু ইডি তা প্রমাণ করতে না পারলে সুদ সমেত ওই অর্থ ফেরত পাওয়ার কথা অর্পিতার, কারণ খাতায়-কলমে সে সবের মালিক অর্পিতাই।দু’বছর আগে একটি মামলায় আদালতের নির্দেশে ১৯৯৫ সালে আটক করা নগদ অর্থ ফেরত দিতে হয়েছে তাদের। আটক করা হয়েছিল ৭.৯৫ লক্ষ টাকা। ২৫ বছর পরে সুদ-সহ ২০ লক্ষ টাকা ফেরত দিতে হয়. কিন্তু এ ক্ষেত্রে অর্পিতার দাবি উলটো, তিনি ইডি-র অফিসারদের কাছে দাবি করেছেন, ওই বিপুল পরিমাণ অর্থ, গয়না, বিদেশি মুদ্রা কিছুই তাঁর নয়। তাঁর ফ্ল্যাটে নিয়মিত যাতায়াতের সুবাদে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ই তাঁর ফ্ল্যাটে ওই সব কিছু রেখেছিলেন বলে অর্পিতার দাবি।
আগে অভিযুক্তর বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া সম্পত্তি সোজা চলে যেত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার মালখানায়। উই এবং ইঁদুরে নোট খেয়ে ফেলার মত ঘটনা ঘটনায় এখন তল্লাশি চালিয়ে নগদ উদ্ধার হলেই তা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ইডি-র অ্যাকাউন্টে জমা করে দেওয়া হয়। বা ব্যাঙ্কে ইডি-র নিজস্ব ভল্টে রেখে দেওয়া হয়।
অভিযুক্তের হেফাজত থেকে যে সব জিনিস উদ্ধার হয়, আইনত সেগুলি অভিযুক্তর সম্পত্তি বলেই বিবেচ্য হয়। অভিযুক্ত যদি আদালতে নথি পেশ করে মালিকানা প্রমাণ করতে না পারলে প্রাথমিকভাবে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়, পরে মামলার নিষ্পত্তি হলে তা সরকারের সম্পত্তি বলে বিবেচিত হয়।
ইডি-র হিসেব বলছে, গত কয়েক বছরে আর্থিক নয়ছয় প্রতিরোধ আইনে মামলার সংখ্যা বেড়েছে। ২০২২-এর ৩১ মার্চ পর্যন্ত ইডি প্রাথমিক ভাবে মোট ১ লক্ষ ৪ হাজার ৭০২ কোটি টাকার নগদ, সম্পত্তি আটক করেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাত্র ৮৬৯ কোটি টাকার সম্পত্তিই বাজেয়াপ্ত করা গিয়েছে। ২০১৯-২০ থেকে আর্থিক নয়ছয় প্রতিরোধ আইনে ইডির দায়ের করা মামলার সংখ্যা ক্রমশ বেড়েছে। ২০১৯-২০-তে ৫৬২টি, ২০২০-২১-এ ৯৮১টি, ২০২১-২২-এ ১,১৮০টি মামলা দায়ের হয়েছে।