আলোর উৎসব দীপাবলি, কিন্তু এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক অন্ধকার দিকের কথাও। দশমহাবিদ্যার প্রথম মহাবিদ্যা হল কালী। দেবী কালীর পদতলে শবের মতো শুয়ে থাকেন শ্মশানবাসী মহাদেব। ধ্যানমন্ত্রে দেবীর রূপ চতুর্ভুজা, লোলজ্বিভা, এলোকেশী। তবে এ বাদেও দেবীর নানা রূপ বর্তমান। রক্ষা কালী, শ্যামা কালী, দক্ষিণা কালী, ডাকাত কালী, শ্মশান কালী-এমন নানা রূপেই পূজিত হন দেবী।
তবে কালীর অন্যন্য রূপের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হল শ্মশান কালী। বিভিন্ন শ্মশানঘাটে কালীর যে রূপটির পুজো (Kalipuja 2024) করা হয়, তা'শ্মশানকালী' নামে পরিচিত। বাংলার প্রায় সব শ্মশানেই শ্মশানকালীর পুজো হয়। কোথাও প্রতিদিন, কোথাও বা বাৎসরিক পুজোর রেওয়াজ।
বাড়িতে যে কালী পুজো করা হয়, তাঁকে বলা হয় রক্ষা কালী বা শ্যামা কালী। যেখানে পুরোহিতদেরই পুজো করার নিয়ম। আবার, শ্মশান কালীর সাধনা করেন মূলত তন্ত্রসাধক শ্মশানবাসীরা। বাড়িতে শ্মশান কালী পুজোর রীতি নেই। শ্মশান কালীর রূপ নিয়েও একাধিক মত রয়েছে।
শ্মশান কালীর রূপ:
তন্ত্রসাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ রচিত বৃহৎ তন্ত্রসার অনুসারে এই দেবীর ধ্যানসম্মত মূর্তির গায়ের রং কাজলের মতো কালো। তিনি সর্বদা শ্মশানে বাস করেন। তার চোখদুটি রক্তপিঙ্গল বর্ণের। চুলগুলি আলুলায়িত, দেহটি শুকনো ও ভয়ংকর, বাঁ-হাতে মদ ও মাংসে ভরা পানপাত্র, ডান হাতে সদ্য কাটা মানুষের মাথা। দেবী হাস্যমুখে নরমাংস খাচ্ছেন। তাঁর গায়ে নানারকম অলংকার থাকলেও, তিনি উলঙ্গ এবং মদ্যপান করে উন্মত্ত হয়ে উঠেছেন। শ্মশানকালীর আরেকটি রূপে তার বাম পা’টি শিবের বুকে স্থাপিত এবং ডান হাতে ধরা খড়গ।
কেওড়াতলা মহাশ্মশানের পুজো:
১৮৭০ সাল থেকে চলে আসছে এই পুজো। এবছর কেওড়াতলা মহাশ্মশানের পুজো পা দেবে ১৪৯ বছরে। শোনা যায়, স্থানীয় এক কাপালিক দুই ব্রাহ্মণ্যের সহায়তায় এই পুজো শুরু করেছিলেন। পুজো শুরু হয়েছিল দুহাতের, জিহ্বাহীন কালী দিয়েই। সেই ধারাই আজও অব্যাহত।
একদিকে শ্মশানকালী পুজো (Kalipuja 2024) হবে আর অপরদিকে চলবে শবদেহের দাহ। কেওড়াতলায় এই পুজো করেন ডোমেরা। পুজোর নির্দিষ্ট সময়ে একটি মৃতদেহ দাহ করার জন্য এনে রাখা হয়। এমন রেওয়াজ রয়েছে রাজ্যের অন্যপ্রান্তের শ্মশানেও। দুর্গাপুর বীরভানপুরের মহাশ্মশানের কালীপুজোও তেমনই এক পুজো। এখানকার দেবী পূজিত হন বৈষ্ণব মতে। এখানে ছাগল বলি প্রথা নিষিদ্ধ। জানা যায়, শ্মশানে শব দেহ না আসা পর্যন্ত দেবীর ভোগ নিবেদন করা হয় না।
একদিকে শবদাহ চলছে এবং অন্যদিকে পুজোর মন্ত্র উচ্চারিত হচ্ছে। এই আবহে একটি ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয় মহাশ্মশানে।
রাজ্যে এমন একাধিক শ্মশান রয়েছে, যেখানে শবদেহ না আসা পর্যন্ত পুজো শুরু হয় না। দক্ষিণ কলকাতার কেওড়াতলা মহাশ্মশানেও এমনটাই রেওয়াজ। তাঁর কথায়, "বছরের পর বছর এই সময় ঠিক এমনটাই দেখে আসছি। বিষয়টি কাকতলীয় হলেও এতে যেন এক গভীর রহস্য রয়েছে, যা এই শ্মশানের পুজোকে আরও বিস্ময়কর করে তোলে।”