দুর্গাপুজো মানেই এখন থিমের ভিড় । মণ্ডপ সজ্জায় অভিনব সব ভাবনা । কিন্তু থিমের ভিড়েও সাবেকি পুজো, বনেদি বাড়ির পুজোর একটা আলাদা আকর্ষণ রয়েছে । বিশেষ করে বনেদি বাড়ির পুজোগুলির সঙ্গে জড়িয়ে থাকে ইতিহাস, ঐতিহ্য । আজ সেরকমই এক বনেদি বাড়ির গল্প বলবে এডিটরজি বাংলা । হাসনাবাদের বিশপুরের ঠাকুরবাড়ির পুজো । এবার ১২১ তম বর্ষে পদার্পণ করল ঠাকুরবাড়ির পুজো ।
১৯১৮ সাল । বিশপুরের আশেপাশে তখন দুর্গাপুজো হত না । সেকথা ভেবেই তখন বিশপুরে দুর্গাপুজোর সূচনা করেছিলেন সংস্কৃত পণ্ডিত হৃষিকেশ পাণ্ডা । সেই থেকেই পুজো হয়ে আসছে এখানে । এত বছর পরেও পুজোর জাঁকজমকে এতটুকু ভাটা পড়েনি ।
বিশপুরের ঠাকুরবাড়ির দুর্গাপুজোর একটা বিশেষত্ব হল ভোগ । জানা গিয়েছে, গত একশো বছর ধরেই ঠাকুরের ভোগ রান্নার জন্য রাঁধুনি আনা হয় পুরীর জগনাথ মন্দির থেকে। পঞ্চব্যঞ্জনে সাজানো হয় ভোগের থালা । সপ্তমীর সকাল থেকেই সাজো সাজো রব । ভোগের এলাহি আয়োজন করা হয় এদিন । অন্ন, লুচি ভোগ দেওয়া হয় দেবীকে । সঙ্গে পাঁচরকম ভাজা, ডাল, নিরামিষ তরকারি, পায়েস, মিষ্টি ।
বিশপুরের ঠাকুর বাড়ির পুজোয় কুমারি পুজোর রীতি রয়েছে । পরিবারে অনূর্ধ্ব ১২বছরের কন্যাসন্তান অথবা ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের কোনও মেয়েকে দেবী রূপে পুজো করা হয় । নিয়ম মেনেই পুজো হয়ে আসছে এখানে । আগে ছাগ বলি প্রথাও ছিল । তবে, বেশ কিছু বছর ধরে তা বন্ধ । কুমরো বলি দেওয়া হয় ।
দুর্গাপুজোর কটা দিন ঠাকুরবাড়িতেই থাকেন গ্রামবাসীরা । পুজোর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত থাকেন গ্রামবাসী । পুজোর পাঁচদিন গমগম করে ঠাকুবাড়ি । এখানকার পুজোর আরও একটা বিশেষত্ব হল, প্রত্যেক বছর পঞ্চমীর দিন গরিব মানুষের জন্য বস্ত্রদানের ব্যবস্থা করা হয় । পঞ্চমী থেকে দশমী পর্যন্ত ঠাকুরবাড়িতে জ্বলে বড় বড় উনুন, চলে রান্না । পাত পেড়ে ভোগ খান গ্রামবাসীরা । চারটি দিন বাড়ির সামনে মেলা বসে । বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । বহু দূর থেকে ঠাকুরবাড়ির পুজো দেখতে আসেন মানুষ ।