চাঁদের বুড়ি চরকা (Charka) কাটে- শিশুমনের কল্পনার এই চরকাই যে হয়ে উঠতে পারে স্বাধীনতা সংগ্রামের হাতিয়ার, মহাত্মা গান্ধী (Mahatma Gandhi) ছাড়া আর কার পক্ষেই বা এমন করে ভাবা সম্ভব ছিল! বস্তুত, চরকা গান্ধীজির কাছে কেবলমাত্র একটি রাজনৈতিক কৌশল ছিল না, তা ছিল সামগ্রিক জীবন দর্শনের অংশ। বাপু প্রতিদিন নিয়ম করে চরকা কাটতেন। কেবল মহাত্মা একা নন, গান্ধী আশ্রমেই সকলেই চরকায় সুতো কাটতেন। হাতে বোণা কাপড়ের প্রথম টুকরোটি সবরমতী আশ্রমে তৈরি হয়েছিল যখন, সেই সময় থেকেই চরকা এবং খাদি গান্ধীর রাজনৈতিক সংগ্রামের অংশ।
কেন চরকা ব্যবহার ভারতীয়দের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করতেন মহাত্মা? এর পিছনে রয়েছে তাঁর নিজস্ব 'নির্মাণের দর্শন'। মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী চরকাকে একটা আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন৷ এই মূল নিহিত রয়েছে ব্রিটিশ শাসনে ভারতের সম্পদ লুণ্ঠনের গভীরে। ইংরেজদের প্রধান ব্যবসা ছিল আধুনিক মেশিনে তৈরি কাপড়ের৷ ব্রিটিশরা ভারতীয় উপমহাদেশের বাজার ছেয়ে ফেলে ব্রিটিশ মিলে তৈরি কাপড়ে। ফলে এই দেশের চরকায় সুতো কেটে তা দিয়ে হাতেবোনা তাঁতের কাপড়ের যে বিশাল ঐতিহ্য ও বাজার ছিল তা প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়৷ সেই সঙ্গে ছিল কৃষকদের উপর নির্যাতন। এই সাম্রাজ্যবাদী প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবেই গান্ধী চরকায় সুতো কাটাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।
গান্ধী মনে করতেন চরকা একটি অস্ত্র। পরমাণু বোমার মতো দানবিক অস্ত্র নয়, দৈব অস্ত্র। চরকা এমন এক হাতিয়ার, যা ভিতর থেকে বদলে দিতে পারে মানুষকে। দেশকে নিজের পায়ে দাঁড় করাতেও পারে চরকা।