''যে ভাষার জন্যে, এমন হন্যে, এমন আকুল হলাম
সে ভাষাতে আমার অধিকার''
বাংলা ভাষার জন্য, বাংলাভাষীর জন্য গর্বের দিন। বাংলাকে ‘ধ্রুপদী ভাষা’র মর্যাদা দিল কেন্দ্র। নতুন করে পাঁচটি ভাষা এই স্বীকৃতি পেয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে বাংলাও।
প্রসঙ্গত, উল্লেখ্য, সারা বিশ্ব আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে যে উদযাপন করে ২১ ফেব্রুয়ারি, তার সঙ্গেও ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে বাংলা ভাষা। ১৯৫২ সালের ওই দিনেই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকায় বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার দাবিতে গড়ে উঠেছিল দুর্বার গণআন্দোলন। রফিক সালাম বরকতদের রক্তে ভিজে গিয়েছিল পূর্ব বাংলার মাটি। ভাষা শহীদদের সেই আত্মবলিদান মনে রেখে, ভাষা আন্দোলনের সেই রক্তাক্ত ইতিহাস মনে রেখেই বিশ্বজুড়ে মাতৃভাষার জন্য পালিত হয় একটা দিন। তাই এ পার বাংলায় বাংলা ভাষার স্বীকৃতির সঙ্গে জড়িয়ে অনেক বড় আবেগ, যা দেশ কাল সীমানার বেড়া মানে না।
এখন থেকে দেশের ধ্রুপদী ভাষার তালিকায় পাকাপাকি ভাবে লেখা থাকবে বাংলার নাম। এই খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাগ করে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের কাছে বাংলাকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি দেওয়ার দাবির সপক্ষে গবেষণাপত্রও পাঠানো হয়েছিল। সেই দাবি মেনে নিল কেন্দ্র। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে 'দীর্ঘ লড়াইয়ের পর জয়' হয়েছে রাজ্যের, এমনটাই মত মুখ্যমন্ত্রীর।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, আপামর বাঙালিকে এই পুরস্কার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা, ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়েই মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্ত। ২০২৪ -এর লোকসভায় ৪২টির মধ্যে ১২টি আসন পেয়েছে বিজেপি। ২০২৬-এ আসন সংখ্যা বাড়ানোর লক্ষ্যেই বাংলাকে ‘ধ্রুপদী ভাষা’র এই স্বীকৃতি, এমনটাই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।
শুক্রবার রাতে মমতা টুইট করে এই খবর ভাগ করে নিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘‘অবশেষে বাংলাকে ধ্রপদী ভাষার স্বীকৃতি দিয়েছে ভারত সরকার। এই খবর ভাগ করে নিতে পেরে দারুণ খুশি।’’ এর পরেই তিনি জানিয়েছেন, দীর্ঘ দিন ধরে এই স্বীকৃতি ‘ছিনিয়ে’ আনার চেষ্টা করছে তাঁর সরকার। এই সংক্রান্ত গবেষণার তিনটি খণ্ড পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রের কাছে। মমতা লিখেছেন, ‘‘আমাদের এই গবেষণা সমন্বিত দাবি মেনে নিয়েছে কেন্দ্র। আমরা অবশেষে ভারতের ভাষা সংস্কৃতির শিখরে পৌঁছেছি।’’
তামিল, সংস্কৃত, তেলুগু, কন্নড়, মালয়ালম, ওড়িয়ার পাশাপাশি ধ্রুপদী ভাষার তালিকায় জুড়ল বাংলা, মরাঠি, পালি, অহমিয়া এবং প্রাকৃত। কোনও ভাষার ইতিহাস বা প্রাপ্ত নথির বয়স যদি ১,৫০০ থেকে ২০০০ বছর হয়, আদি ভাষা এবং সাহিত্যের সঙ্গে বর্তমানের ভাষা এবং সাহিত্যের ফারাক যদি স্পষ্ট হয়, তবেই সেই ভাষাকে ধ্রুপদীর স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সেই স্বীকৃতি পেল বাংলা।
ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি পেলে সেই ভাষা নিয়ে গবেষণা এবং সাহিত্য চর্চার জন্য বিশেষ অনুদান দেয় কেন্দ্র। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আলাদা বিভাগ বা কেন্দ্র গঠন করা হয়। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সেই ভাষার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।