আকাশে-বাতাসে উড়ছে রং । আবিরে মাখামাখি ছোট থেকে বড় । বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে চলছে দোল উৎসব (Holi 2023 ) উদযাপন । চিরাচরিত প্রথা মেনে এবারও দোল পূর্ণিমার দিন নদিয়াতে সতী মায়ের পুজো হচ্ছে । আর শতাব্দী প্রাচীন দোলযাত্রার এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে নজর কাড়ে সতী মায়ের দোলমেলা । বহু দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ মেলায় আসেন । ভক্তদের দাবি, গঙ্গাসাগর মেলা, জয়দেবের মেলার থেকে কোনও অংশে কম ভিড় হয় না এই সতী মায়ের মেলায় ।
নদিয়ার কল্যাণীর ঘোষপাড়ায় বিখ্যাত সতী মায়ের মন্দির । সতী মা বৈষ্ণবদের কর্তাভজা সম্প্রদায়ের মানবী দেবী বলে পরিচিত । দোল পূর্ণিমার দিন মায়ের পুজোকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই মন্দির প্রাঙ্গনে ভক্তদের ভিড় । লাইনে দাঁড়িয়ে মায়ের পুজো দিচ্ছেন, অনেকের আবার দন্ডি কাটছে । পুকুরে ডুব দিচ্ছেন অনেকে । প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, পুকুরে স্নান করে ডালিম গাছে ঢিল বাঁধলে মনোস্কামণা পূর্ণ হয় । সেই ছবিও দেখা গেল এদিন । আর পুজো উপলক্ষে এবছরও বিরাট মেলা বসেছে । একসময় প্রায় ৬০০ বিঘা জমিতে সতীমায়ের মেলা বসত । বর্তমানে ৩০ একর এলাকায় মেলা বসে । মেলা পরিচালনা করে কল্যাণী পুরসভা । জিলিপ, নানান ধরনের বাড়ি সাজানোর জিনিস, ঠাকুরের ছবি ও মূর্তির দোকান স্টল জুড়ে । জানা গিয়েছে, প্রায় ৬০০টি স্টল বসে এই মেলায় ।
আরও পড়ুন, Sovon-Baisakhi Holi : বসন্তের রঙে রঙিন শোভন-বৈশাখী, একে অপরকে মাখালেন রং, চুমুক ঠান্ডাইয়ে
সতী মা ও মেলাকে কেন্দ্র করে এক ইতিহাস আছে । কর্তাভজা সম্প্রদায়ের প্রবর্তক হলেন নদিয়ার ঘোষপাড়ার আউলচাঁদ । ভক্তরা তাঁকে গোরাচাঁদ নামে ডাকতেন । এমনকী, শ্রীচৈতন্যের অবতার হিসেবে মানতেন । এই ঘোষপাড়ারই বাসিন্দা ছিলেন রামশরণ পাল। তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম ছিল সরস্বতী। কথিত আছে মরণাপন্ন সরস্বতীর সারা গায়ে পুকুর থেকে মাটি এনে লেপে দিয়েছিলেন আউলচাঁদ। তাতেই সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন সরস্বতী। পরবর্তীকালে বাড়ির ডালিম গাছের নীচে দীর্ঘ সাধনার পর তিনিই হয়ে ওঠেন সতী মা। আউলচাঁদের পর সতী মা হয়ে ওঠেন কর্তাভজা সম্প্রদায়ের প্রধান। কথিত আছে, তিনি যে ডালিম গাছের নীচে বসে সাধনা করেছিলেন, সেই ডালিম গাছে ঢিল বাঁধলেই ভক্তদের ইচ্ছাপূরণ হয়। ঘোষপাড়ায় তাঁর নামাঙ্কিত মন্দির চত্বর এবং সমাধিক্ষেত্রে ভক্তরা গিয়ে পুজো দেন। পুজোর ডালিও মন্দির চত্বরেই একাধিক ব্যক্তি বিক্রি করেন। ডালিতে ঢিলের জায়গায় দেওয়া থাকে সুতো বাঁধা মাটির ঘোড়া।মন্দিরের কাছেই রয়েছে পুকুর। সেই পুকুরে স্নান করে ভক্তদের মন্দিরে পৌঁছে ডালিম গাছে ঢিল বেঁধে দিতে হয়। তাতেই পূরণ হয় মনস্কামনা। আর, মনস্কামনা পূরণ হলে এসে ডালিম গাছ থেকে ঢিল খুলে ফেলতে হয়। এটাই সতী মায়ের মন্দিরের নিয়ম। এখানে নিত্যপুজোর পাশাপাশি, প্রতি শুক্রবার বিশেষ কীর্তনের আসর বসে।