১৮ ডিসেম্বর, ক্যালেন্ডারের পাশাপাশি মনেও লাল দাগ দেওয়া সেই কবে থেকেই। কেন, না, ওদিন ফুটবল বিশ্বকাপ। যে দেশ কোনও দিন বিশ্বকাপ খেলেইনি, সে দেশে বিশ্বকাপ নিয়ে এমন মাতামাতি, পাড়ায় পাড়ায় দলবাজি, পছন্দের দলের জন্য রাতের পর রাত জাগা, প্রিয় তারকার জন্য স্নায়ুর চাপ বাড়া, যে দেশের নাড়িতেই আবেগ, সেখানে এসব দস্তুর।
ফুটবল বললেই এ পার-ও পার দুই বাংলাই একাত্মবোধ করে লাতিন আমেরিকার সঙ্গে। নেইমার-মেসিরা জানতেও পারেন না, কত কচি মুখের চার বছর পর পর এক মাস মুখ দেখাদেখি বন্ধ থাকে, কত বাড়িতে হাঁড়ি চড়ে না মেসির ফর্মে একটু এদিক ওদিক হলে।
Prize money for world Cup: ফুটবলে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দল কত টাকা পায়? ক্রিকেটেই বা কেমন পুরস্কার মূল্য
আর্জেন্টিনা ফাইনালে উঠেছে। একটু একটু করে কাছে আসছে মেসির বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন। বাংলা জাগছে, ক্ষত ভুলছে একটু একটু করে। ব্রাজিল অন্ত প্রাণও নিজের মনকে বোঝাচ্ছে , মেসিরা গোল দিলে রোনাল্ডিনহো হাত তালি দেন, তাহলে আমরা পারব না? হলুদ সবুজের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে, কাপটা অন্তত লাতিন আমেরিকায় থাকুক।
ডার্বির ম্যাচ পর্যন্ত মিস হয়ে যায় এই ক'টা দিন। ইস্টবেঙ্গল না মোহনবাগান, বেঁচে থাকার সঙ্গে স্ট্যাম্পের মতো সেঁটে যাওয়া পরিচয়টাও ফিকে হয়ে যায় ফুটবল বিশ্বকাপের ক'দিন।
রাজনীতি, আবেগ, ফুটবলের জন্য জীবন বাজি রাখার এই আবেগে, কোথায় যেন এক হয়ে যায় বাংলা-ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা। মনে হয় মারাদোনাহীন পৃথিবীতে অভিভাবকের মতো মেসি-আলভারেজদের সঙ্গে রাত জাগতেই এই নশ্বর জীবনটুকু।
বাংলা এমনই এক নায়ককেই তো দিনরাত খোঁজে, যে আলোয় থেকে অন্ধকারের খোঁজ রাখে, ৯০ মিনিটের লড়াই শেষে যে হেরে যাওয়া প্রতিদ্বন্দীর কাঁধে হাত রাখে, ম্যাচে হার-জিতের ঊর্ধ্বে গিয়ে যে সারা বিশ্ববাসীর মন জিতে নেয়। এমন ঐশ্বরিক সংবেদী মনের কাছেই তো সপে দেওয়া যায় গোটা জাতির হার-জিত-ক্ষোভ-ব্যথা-বঞ্চনা-যন্ত্রণা-প্রেম।
খেটে খাওয়া মানুষ থেকে, ঘোর সংসারী মধ্যবিত্ত তাই চারবছর পর পর রাত জাগে একটা বিশ্বাস থেকে, লিওদের পায়ে পায়ে যে খেলা, ওটা আসলে জীবনেরই আরেক নাম।