'পুরো গর্ডন ব্যাঙ্কসের মতো সেভ করেছে'! ২৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৭। খানিকক্ষণ আগেই তৎকালীন মোহনবাগান ক্লাবের সঙ্গে ইডেন গার্ডেন্সে ম্যাচ শেষ হয়েছে ব্রাজিলের কসমস ক্লাবের। ম্যাচ পরবর্তী পার্টিতে মোহনবাগানের গোলকিপার শিবাজি বন্দ্যোপাধ্যায়কে জড়িয়ে ধরে এই কথা বলেছিলেন সেদিন কলকাতা তথা ভারতের মুখ্য অতিথি এডসন আরেন্তেস দো নাসিমেন্টো। যাঁকে গোটা দুনিয়া একডাকে চেনে 'পেলে' নামে। তখন আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নিয়েছেন বিশ্ব ফুটবলের কিংবদন্তি। তাও সেদিন তাঁর দল যে ২-২ গোলে আটকে যাবে মোহনবাগানের কাছে, এমনটা বোধহয় ভাবেননি কেউই। কিন্তু, তা সত্ত্বেও, যেভাবে তিনি স্নেহমিশ্রিত সম্মানে ভরিয়ে দিয়েছিলেন শ্যাম থাপা, সুভাষ ভৌমিক, গৌতম সরকার, শিবাজি বন্দ্যোপাধ্যায়দের, তা প্রমাণ করে, শুধু ভাল ফুটবল খেললেই হয় না। ফুটবলের সম্রাট হতে গেলে হৃদয়কেও হতে হয় সম্রাটের মতোই।
ফুটবল সম্রাটের সামনে মাথা উঁচু করে লড়েছিলেন বাঙালিরা। দেখিয়ে দিয়েছিলেন ফুটবল মাঠে তাঁরাও কম যান না! পায়ে বল নিয়ে দৌড়, ট্যাকল, পাস সব কিছুই ছিল যেন ছকে বাঁধা। ছক কষেছিলেন পিকে। কলকাতা ময়দানের জাদুকরের কাছে আটকে গিয়েছিলেন ফুটবলে জাদুকর। তাঁর হেড আর ফ্রি-কিক 'গর্ডন ব্যাঙ্কসের মতো' সেভ করেছেন বলে পেলে জড়িয়ে ধরেছিলেন শিবাজি বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
দীর্ঘ ৪৫ বছর আগে এক বৃষ্টিভেজা বিকেলে ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছিল ইডেনে। সক্রিয় ফুটবল জীবন থেকে অবসর নেওয়ার পর পেলে চলে যান নর্থ আমেরিকান সকার অ্যাসোসিয়েশন লিগে খেলার জন্য। সঙ্গে ব্রাজিল থেকে একঝাঁক তারকা ফুটবলার যায়। যার মধ্যে ছিলেন কার্লোস আলবার্তো, চিনালিয়ার মতো ফুটবলার। সবাই কসমস দলে যোগ দেন। মোহনবাগান ক্লাবের উদ্যোগে পেলে কলকাতায় আসে। মাকালু বিমানে এসেছিলেন কিংবদন্তি। টারম্যাকে ছিল উপচে পড়া ভিড় । তখন ভরা বর্ষা। প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যেও গ্র্যান্ড হোটেলের সামনে হাজার হাজার লোক ভিড় করে থাকত পেলেকে একঝলক দেখার জন্য। এয়ারপোর্ট থেকে হোটেলে পৌঁছতে লেগেছিল ৫ ঘণ্টা। ম্যাচের দিন তুমুল বৃষ্টি ছিল। বৃষ্টি ভেজা মাঠে ফ্লপ ফুটবল সম্রাট। পেলের দেহরক্ষী জিওফ্রে গেরার্ড জানান, পেলের পায়ের ইন্সুয়ারেন্স করা আছে। শেষপর্যন্ত ম্যাচটা ২-২ ড্র হয়। মোহনবাগানের হয়ে গোল করেন মহম্মদ হাবিব এবং শ্যাম থাপা।
ফুটবল সম্রাটের প্রয়াণে মোহনবাগানের সঙ্গে তাঁর দলের সেই ম্যাচের কথা মনে করে স্পষ্টতই স্মৃতিমেদুর বাঙালি।