বক্সিং ডে টেস্টের আগেই অবসরের সিদ্ধান্ত। ভারতীয় ক্রিকেটে শেষ হয়ে গেল অশ্বিন যুগ। দেশে ফিরতেই আবেগে ভাসল তামিলনাড়ু। বিমানবন্দরে সংবর্ধনায় ভাসলেন। তাঁর বাড়িতেও উপচে পড়ল ভিড়। তবে অশ্বিন ফিরে জানালেন, এখনই ক্রিকেটকে বিদায় নয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলবেন না। কিন্তু আইপিএল বা ঘরোয়া ক্রিকেট, বিভিন্ন টুর্নামেন্টে খেলতে চান তিনি।
ভারতীয় ক্রিকেটে স্পিন কিংবদন্তি। এই তালিকা করতে বসলে প্রথম তিন জনের মধ্যে যার নাম আসবে, তিনি রবিচন্দ্রন অশ্বিন। তাঁর সঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেটে অনেক মুহূর্ত জড়িয়ে। অস্ট্রেলিয়া সফরের মাঝপথে টেস্ট ক্রিকেটের নেতৃত্ব ছেড়েছিলেন সুনীল গাভাসকর। এই অস্ট্রেলিয়া সফরেই আচমকা টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। এবার অস্ট্রেলিয়া সফরের মাঝপথে, ব্রিসবেন থেকেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন।
দেশের হয়ে ১০৬টি টেস্ট খেলেছেন। টিম ইন্ডিয়ার হয়ে সর্বাধিক উইকেট। ৫৩৭টি উইকেট সংগ্রহ। অন্যতম বোলিং অলরাউন্ডারও তিনি। ৩৫০৩ রানও করেছেন। আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটে ২০১১ সালে অভিষেক হয় অশ্বিনের। ১৪ বছরের কেরিয়ারে দেশকে অনেক সাফল্য এনে দিয়েছেন। এবার যবনিকা পতন। সব ধরনের ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন অশ্বিন। কেরিয়ারে এমন অনেক মুহূর্ত উপহার দিয়েছেন, যা দেশের কাছে গর্বের।
সিডনির গ্রেট ইনিংস
২০২০-২০২১ মরশুমে শেষবার অস্ট্রেলিয়া যায় টিম ইন্ডিয়া। অ্যাডিলেডে প্রথম টেস্টে হেরেছিল ভারত। মেলবোর্নে দ্বিতীয় টেস্টে ঘুরে দাঁড়ায় বিরাট ব্রিগেড। তৃতীয় টেস্টে জিততেই হত। সিডনিতে দ্বিতীয় ইনিংসে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল ভারত। ওই দিন মাত্র ৪৫ ওভার বাকি ছিল। আহত ছিলেন অশ্বিন। সেই সময় অস্ট্রেলিয়ার পেস আক্রমণের সামনে ১২৮ বলে ৩৯ রানের ইনিংস আসে তাঁর ব্যাট থেকে। অশ্বিনের ওই ইনিংসে টেস্টটি ড্র করে সিরিজে টিকে যায় টিম ইন্ডিয়া। ব্রিসবেনে টেস্ট জিতে সেবার প্রথম অস্ট্রেলিয়া সিরিজ জেতে টিম ইন্ডিয়া।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মনোস্তাত্বিক লড়াই
যত সময় গিয়েছে, ধীরে ধীরে ভারতীয় দলে অফস্পিনার হিসেবে নিজের ভিত মজবুত করেন অশ্বিন। কিন্তু বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবেও ক্রিকেটবিশ্বে নিজের জায়গা তৈরি করেন অশ্বিন। ২০২২ আইসিসি T20 বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে উত্তেজনার পারদ চড়েছিল। প্রথমে ব্যাট করে ১৬০ রান তোলে পাকিস্তান। ৪ রান তাড়া করতে নেমে মাত্র ৩১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে টিম ইন্ডিয়া।বিরাট কোহলি ও হার্দিক পান্ডিয়ার বড় পার্টনারশিপে ম্যাচ জেতার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। অশ্বিন যখন ব্যাট করতে নামেন, তখন বাকি ছিল শেষ বলে ২ রান। পাক বোলার মহম্মদ নওয়াজের সঙ্গে মাইন্ড গেমে ওয়াইড বল করাতে বাধ্য করেন অশ্বিন। শেষ বলে মিড অফের দিকে ঠেলে ১ রান নিয়ে ভারতকে জিতিয়ে ফেরেন অশ্বিন।
টেস্ট ক্রিকেটে সেরা বোলিং ফিগার
ইন্দোরে ২০১৬ সালে ঘরের মাঠে টেস্ট খেলতে নামে টিম ইন্ডিয়া। ওই টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করেন বিরাট কোহলি। প্রথম ইনিংসে ৫৫৭ রান তোলে ভারত। প্রথম ইনিংসে দুরন্ত বোলিং করে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন আপকে একাই ধ্বংস করেন অশ্বিন। ৮১ রান দিয়ে ৬ উইকেট তুলে নেন তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৫৯ রান দিয়ে ৭ উইকেট পান তিনি। সেবার ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে মোট ২৭টি উইকেট তুলে নেন অশ্বিন। সিরিজের সেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হন অশ্বিন।
টেস্ট ক্রিকেটে দ্রুততম ৩০০ উইকেট
টেস্ট ইতিহাসে দ্রুততম ৩০০ উইকেটের মালিক রবিচন্দ্রন অশ্বিন। মাত্র ৫৪টি ম্যাচে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। ২০১৭ সালে নাগপুরে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে এই রেকর্ড গড়েন অশ্বিন। এর আগে দ্রুততম ৩০০ উইকেটের মালিক ছিলেন ডেনিস লিলি। ওই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট তুলে নেন তিনি। ওই টেস্টে জয় পায় টিম ইন্ডিয়া।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির লাস্ট ওভার
লাল বলের ক্রিকেটের পাশাপাশি সীমিত ওভারেও একের পর এক ইতিহাস তৈরি করে গিয়েছেন অশ্বিন। ২০১৩ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল। অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি অশ্বিনকে শেষ ওভার করতে পাঠান। শেষ ওভারে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ১৫ রান। মাত্র ৯ রান দিয়ে শেষ করে আসেন অশ্বিন। সেই প্রথম আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতে ভারত। একমাত্র অধিনায়ক ধোনির সেই রেকর্ড এখনও অক্ষত।