ভারত অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছে মাথা নীচু করে। বেঙ্গালুরু থেকে মুম্বই, ডাউন আন্ডারে অজিদের বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগে এই তিন শহরে রোহিত-বিরাটদের ক্রিকেটের কঙ্কালসার চেহারাটা সামনে এনে দিল কিউইরা। তাহলে কী লাল বলের ক্রিকেটে অধিনায়ক রোহিত শর্মার শেষের শুরু হয়ে গেল ?
প্রাক্তনরা বলছেন, গোটা সিরিজে ভুলে ভরা ভারত। বেঙ্গালুরুতে ভিজে পিচে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত। পুণে এবং মুম্বইয়ে ঘূর্ণি পিচ তৈরি করে কিউই স্পিনারদের হাতে বধ হয়ে যাওয়া। প্রাক্তনদের দাবি, অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে ভারতীয় ক্রিকেটের কাছে এই ধাক্কা জরুরি ছিল। কপিল দেব থেকে মদনলাল, সবার মতে বিদেশ সফরের আগে ভারতীয় ক্রিকেটে ঔদ্ধত্যে ধাক্কা দিয়ে গেল নিউজিল্যান্ড। রোহিত শর্মাদের বাস্তবের মাটিতে টেনে আনলেন টম ল্যাথম ও তাঁর নিউজিল্যান্ড।
অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে প্রশ্ন হচ্ছে, এই ভারতীয় দলের কোচের পদে কি গৌতম গম্ভীর যোগ্য ? গম্ভীরকে কোচ করা নিয়ে ভারতীয় বোর্ডের সিদ্ধান্তে আগেই আড়াআড়ি ভাগ হয়েছিল ক্রিকেট মহল। ঘরের মাঠে বিরাট কোহলিরা চুনকাম হওয়ার পর সেই ফাটল যেন আরও চওড়া হল।
রাহুল দ্রাবিড় পরবর্তী ভারতের কোচ গৌতম গম্ভীর। ক্রিকেট পন্ডিতদের দাবি, অনিল কুম্বলে থেকে রবি শাস্ত্রী কোনও প্রাক্তনই এত সাজানো ভারতীয় দল পাননি। প্রশ্ন ওঠে হাই-প্রোফাইল ভারতীয় দলকে কী চালতে পারবেন গুরু গম্ভীর ? শ্রীলঙ্কার পর এবার ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড, গুরু গম্ভীরের পারফরম্যান্স নিয়ে সেই প্রশ্নটাই খুঁচিয়ে দিল।
অনেকেই দাবি করছেন, ঘরের মাঠেই নাকি জীবনের শেষ টেস্ট খেলে ফেললেন দুই সিনিয়র ক্রিকেটার রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলি। বোর্ডের অন্দর থেকেই প্রশ্ন উঠছে, টি-টোয়েন্টি পর এবার লাল বলের ক্রিকেট থেকেই তাঁদের সসম্মানে বিদায় চাইছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। ঘরের মাঠে এই ব্যর্থতার জন্য এই দুই সিনিয়র ক্রিকেটারকেই কার্যত দায়ী করা হচ্ছে।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক চিন্নাস্বামী থেকে ওয়াংখেড়েতে কী কী লজ্জার নজির তৈরি করল ভারতীয় ক্রিকেট। ২৪ বছর পর ঘরের মাঠে চুনকাম হওয়ার লজ্জা। ২০০০ সালে ভারতে এসে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এবার সেই রেকর্ডকে ছাপিয়ে গেল নিউজিল্যান্ড। ১৯৮৩ সালে শেষবার ভারতে এসে ৩-০ সিরিজ জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৯৫৮ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত তিন ম্যাচের সিরিজে একাধিকবার হেরেছে ভারত।
তাঁর উপর কোনও চাপ নেই। এমনটাই দাবি ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মার। কিন্তু তাই কী ? পরিসংখ্যান কিন্তু অন্য কথা বলছে। অধিনায়ক হিসাবে ঘরের মাঠে এই নিয়ে পাঁচটি টেস্ট হারের নজির রোহিত শর্মার। কোচ হিসাবেও গুরু গম্ভীরের মাথায় কাঁটা বাড়ছে। শ্রীলঙ্কার পর ঘরের মাটিতে প্রথম সিরিজ হার।
তাহলে, পার্থ কলিং। ২২ নভেম্বর থেকে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পাঁচ টেস্টের সিরিজ খেলতে নামবে টিম ইন্ডিয়া। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠতে হলে এই সিরিজে ভারতকে ৪-০ ফলে জিততে হবে। এবার সিরিজ জিতলে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে হ্যাটট্রিক করবে টিম ইন্ডিয়া।
তার আগে দেখে নেওয়া যাক, এবারের ভারতীয় দলকে। অধিনায়ক রোহিত শর্মা সঙ্গে ব্যাটিং দফতরে রয়েছেন, যশস্বী জয়সওয়াল,অভিমুন্য ঈশ্বরন, সরফররাজ খান, ঋষভ পন্থ (উইকেট কিপার), শুভমন গিল, ধ্রুব জুরেল (উইকেট কিপার), বিরাট কোহলি এবং লোকেশ রাহুল।
এই দলের চার অলরাউন্ডার হলেন, রবিচন্দ্রণ অশ্বিন, রবীন্দ্র জাডেজা, নীতীশ কুমার রেড্ডি এবং ওয়াশিংটন সুন্দর। পাঁচ বোলার, যশপ্রীত বুমরা, আকাশদীপ সিং, হর্ষিত রানা, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ এবং মহম্মদ সিরাজ।
এই দল নিয়ে কী সাফল্য আসবে ? রোহিত কতটা আত্মবিশ্বাসী তা জানা নেই। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া সফর নিয়ে আগে থেকেই আশাবাদী রবি শাস্ত্রী থেকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। সবার দাবি, ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড সিরিজকে নিয়ে এত আলোচনার কিছু নেই। এর আগেও তাবড় ক্রিকেট খেলিয়ে দেশকে ল্যাজেগোবরে হতে হয়েছে। সামনের দিকে তাকাতে হবে। রোহিত-গম্ভীর জুটির উপরেই ভরসা রাখতে হবে।
তাঁদের আশা, অস্ট্রেলিয়ার মাটি থেকেই ঘুরে দাঁড়াবে এই ভারতীয় দল। ফের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলবে রোহিত ও তাঁর টিম ইন্ডিয়া।