ধ্বংসস্তুপের মধ্যে থেকে ফিনিক্স পাখির মতো ঘুরে দাঁড়ানোর মহাকাব্য লিখে বিশ্বজয় করল আর্জেন্টিনা। প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হারের পর গোটা ফুটবলবিশ্বের বিদ্রুপ আর সমালোচনার আগুনে পুড়তে পুড়তে জীবনের শেষ বিশ্বকাপে জ্বলে উঠলেন লিওলেন মেসি। জায়গা করে নিলেন ফুটবল ইতিহাসে। কিংবদন্তি দিয়েগো মারাদোনা এই নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার ২ বছর পর তাঁকে যেন বিদায়ী গান স্যালুট দিলেন সার্থক উত্তরসূরী। গোটা পৃথিবীর ফুটবল আবেগের রং আজ নীল-সাদা। গোটা দুনিয়া বিস্ময়ভরা চোখে দেখছে এক আশ্চর্য কামব্যাকের মহাকাব্যিক আলেখ্য। দেখছে ফুটবলের ঈশ্বর দিয়েগোকে স্পর্শ করছেন ফুটবলের আর এক বরপুত্র লিও মেসি।
৩৬ বছরের অপেক্ষার অবসান। বুয়েন্স আইরেস থেকে বরানগর- গোটা পৃথিবীর আর্জেন্টিনা সমর্থকের শাপমুক্তির লগ্ন। এই জয় যেমন লিও মেসির, এই জয় যেমন চাণক্য স্কালোনির, ঠিক তেমনই এই জয় দিয়েগো মারাদোনার, যাঁর স্বপ্ন মুখ থুবড়ে পড়েছিল ১৯৯০ সালের ফাইনালে। সাড়ে তিন দশকের যাবতীয় অপ্রাপ্তি ধুয়ে দিচ্ছে নীল-সাদা আনন্দাশ্রু। জমাট বাঁধা কান্নার বরফ গলিয়ে দিচ্ছে লিও মেসির অলৌকিক বাঁ পা। তাঁর প্রতিটি ড্রিবল যেমন ছিটকে দিয়েছে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের, শরীরের মোচড়ে, শিল্পীর দক্ষতায় তিনি যেমন ভেঙে দিয়েছেন বিপক্ষ রক্ষণ, ঠিক তেমনই কোটি কোটি আর্জেন্টিনা সমর্থক মুছে নিয়েছেন চোখের জল, ব্যর্থতার চেনা শিকল ছিঁড়ে আকাশে উড়ছে ফুটবলের সূর্যমুখী নিশান।
টুর্নামেন্ট যত এগিয়েছে, ততই নীল-সাদা জার্সি ক্রমশ হয়ে উঠেছে গোটা লাতিন আমেরিকার প্রতিনিধি। কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিল ছিটকে যাওয়ার পর মেসিরাই রয়ে গিয়েছিলেন লাতিন ফুটবল সভ্যতার শেষ সামুরাই হয়ে। ২০০২ সালের পর বিশ্বকাপ ছুঁতে পারেনি লাতিন আমেরিকা। টানা ২০ বছরের সেই খরা কাটাল আর্জেন্টিনা। গ্যালারিতে দিয়েগো সশরীরে ছিলেন না, ছিলেন ব্যানারে, পোস্টারে। তিনি দেখলেন আর্জেন্টিনা আবারও স্পর্শ করল শিখর। বাতিস্তুতা যেমন দেখলেন, ঠিক তেমনই ব্রাজিলের রোনাল্ডো, রোনাল্ডিনহো, কাফুরাও সাক্ষী রইলেন লাতিন আমেরিকার বিজয়ের। হাসপাতালে শুয়ে মেসিদের মহাকাব্যিক জয় দেখলেন কিংবদন্তি পেলে। এই জয় তো তাঁদের প্রত্যেকের। এই জয় গোটা লাতিন আমেরিকার।