ফুটবল নিয়ে বাঙালির গর্বের শেষ নেই। এটা সত্যি, যে একটা সময় ছিল, যখন বাংলার ফুটবল মানেই দেশের গর্ব। বর্তমানে বাংলায় ফুটবল নিয়ে আবেগ থাকলেও বাংলায় পুঁজি নেই। নেই মোহনবাগান বা ইস্টবেঙ্গলের সেই চিরাচরিত লড়াইও। তবু বেঁচে আছে কিছু অদম্য় পরিশ্রম, ভালবাসা ও নিষ্ঠা। তেমনই এক উদাহরণ শিলিগুড়ির সূর্য সেন কলোনির বাসিন্দা রাজা বর্মন (Raja Burman)।
উত্তরবঙ্গ থেকে ফুটবলে কোনও ছেলে সন্তোষ ট্রফিতে রাজ্যের টিমে সুযোগ পাবে, এটাই ভাবতে পারেনি কেউ। বাংলা সন্তোষে (Santosh Trophy 2022) রানার্স হয়েছে। তবে টুর্নামেন্টে যোগ্য সম্মান রেখেছেন ২১ বছরের এই যুবক। এখনও অনেক পরিশ্রম করতে হবে। যেতে হবে অনেকটা পথ। এডিটরজি বাংলাকে তাঁর লড়াইয়ের কাহিনি জানালেন বাংলা টিমের গোলকিপার (Bengal Team Goalkeeper) রাজা।
চুলের কাটিং, চেহারা, স্টাইল। বাংলায় চট করে এমন গ্ল্যামারার্স ফুটবলার চোখে পড়ে না। সদ্য সন্তোষ ট্রফিতে বাংলার জার্সিতে খেলে এসেছেন। কিন্তু বাস্তবের লড়াইটা একেবারেই আলাদা। বাবা রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন। প্রতি সপ্তাহের মায়ের ওষুধের খরচা অনেক। এই অনটনের সংসারে অর্ধেক মানুষের লড়াই থেমে যায়। কিন্তু রাজা আর পাঁচটা ছেলের মতো নন। জানালেন, "ফুটবল খেলে যেটুকু রোজগার হয়, তা সংসারে লাগে। এখন বাবার বয়স হয়েছে তো। তাই কাজ করতে বারণ করেছি। মায়ের ওষুধের খরচাও দিতে হয়।" শিলিগুড়িতে ফুটবলের হাতেখড়ি হয়েছিল কাঞ্চন সরকারের কাছে। পরবর্তী কালে গোলকিপিং ট্রেইন করেছেন দীপঙ্কর দেবনাথ, সঞ্জীব দে, জয়ব্রত ঘোষ সহ আরও অনেক কোচের কাছে। ২০১৯ সালে এটিকে জুনিয়র টিমের হয়ে সুযোগ। তারপর কলকাতা লিগে ইউনাইটেড স্পোর্টস টিমে সুযোগ। তাঁর ওই পারফরম্য়ান্স চোখে পড়েছিল ফুটবল কর্তাদের। এই বছর সন্তোষ ট্রফির প্রথম একাদশে বাংলার জার্সি গায়ে মাঠে নামেন রাজা বর্মন। এডিটরজিকে রাজা জানান, "ইউনাইটেড স্পোর্টসে (United Sports) ভাল খেলাটাই আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।" কেরালায় এবার সন্তোষ ট্রফি খেলতে গিয়ে এত দর্শকের সামনে পারফরম্যান্স। কেরলের (Kerala) বিরুদ্ধে ফাইনালে পেনাল্টি শুটআউটে মাঠে নামা, সব কিছুই বাড়তি আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে রাজাকে। সন্তোষ ট্রফির পর এবার লক্ষ্য আরও এগিয়ে যাওয়া। রাজার স্বপ্ন, একদিন এটিকে বা মুম্বই সিটি এফসির জার্সি গায়ে মাঠে নামবেন।
জাতীয় দলের গোলকিপার সুব্রত পালই (Subrata Paul) আদর্শ রাজা বর্মনের। তাঁর মডেল ফুটবল ফলো করেন তিনি। আর আন্তর্জাতিক ফুটবলে গোলকিপার বললেই মনে আসে ম্যানুয়েল নুয়েরের (Manuel Nuyer) কথা। আর ওভারঅল রোনাল্ডো। পরিশ্রম, প্রতিভা ও স্টাইল। সর্বাঙ্গিনভাবে রোনাল্ডোর (Christiano Ronaldo) মতোই হতে চান রাজাও। তবে লকডাউনে বেশ সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছিল। টুর্নামেন্ট বন্ধ। খেলা বন্ধ হলে রোজগারও বন্ধ। সেই সময়টা অনেকটাই কঠিন ছিল। রাজা জানান, "লকডাউনে সমস্যায় পড়ে গিয়েছিলাম। বাড়ির আর্থিক অবস্থা খারাপ। একটা কিছু করতেই হবে। নিজেকে মোটিভেট করতাম। আশা ছিল যে একদিন সুযোগ আসবে। নিজেকেই নিজে চ্যালেঞ্জ করতাম। যতক্ষণ মাঠে থাকতাম, ফ্রি থাকতাম। কিন্তু মাঠ থেকে ফিরলেই অস্বস্তি হত। তবে আমার মনে হয়, খারাপ সময় আসে। ভালোর পাশাপাশি খারাপ সময়টাকেও উপভোগ করতে হবে। আমি সেই সময় নেগেটিভ ভাবতাম না। সব সময় পজিটিভ থাকার চেষ্টা করতাম।"
আরও পড়ুন: বৃহস্পতিবারের ম্যাচে মুখোমুখি গুজরাট ও আরসিবি, জিতলে প্লে-অফে যাওয়ার আশা কোহলিদের
এবার সন্তোষ ট্রফিতে বাংলার (Team Bengal) জার্সিতে নামাটা অনেকটাই আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে রাজার। জানান, "বাংলা টিমের অতীতের সাফল্য আমাদের চাপের কারণ ছিল। আমরা প্রত্যেকটা ম্যাচ ভাল খেলেছিলাম। ভাগ্যের জন্য ফাইনালে হারতে হয়।" তবে এটাই শেষ নয়। সদ্য ২১ পেরিয়ে ২২ বছরে পা রাখবেন। রাজার মতে, "এখনও অনেক জার্নি বাকি। একটা দিন আসবে, যখন আরও নিজের প্রতিভা দেখানোর সুযোগ পাব।"