"দুই গ্যালারি একই স্বর, জাস্টিস ফর আরজি কর।" কলকাতা ময়দানে যেন তৈরি হল ইতিহাস। আরজি কর কাণ্ডের জন্য শনিবার বাতিল করা হয় ডুরান্ড কাপের কলকাতা ডার্বি। ম্যাচ বাতিল হলেও যুবভারতীর ভিআইপি গেটে জমায়েতের ডাক দেয় দুই প্রধান ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান। মিছিলে যোগ দেন মহমেডান সমর্থকরাও। বিকেল ৪টে বাজার সঙ্গেই সঙ্গেই কারও গায়ে লাল-হলুদ, কারও গায়ে সবুজ-মেরুন। আবার কারও হাতে সাদা-কালো জার্সি। দলের পতাকার পাশাপাশি দেখা যায় জাতীয় পতাকা। গাওয়া হল জাতীয় সঙ্গীত। আর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তিন প্রধানের সমর্থকরা আরজি কর কাণ্ডের ন্যায়বিচার চাইলেন। বিকেল চারটে থেকে পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ। দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়ায়। আর বিক্ষোভের জেরে অবরুদ্ধ ই এম বাইপাস।
যুবভারতী স্টেডিয়ামে বিধাননগর পুলিশ আগেই ১৪৪ ধারা জারি করেছিল। সমর্থকরা বাইপাস থেকে ভিআইপি গেটের দিকে ঢুকতেই তেড়ে যায় পুলিশ। সমর্থকদের উপর লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে। বিরাট সংখ্যক পুলিশ সমর্থকদের তাড়া করে। পুলিশ-সমর্থকদের খণ্ডযুদ্ধ হয়। আটক করা হয় একাধিক সমর্থকরা। প্রিজন ভ্যানে একই সঙ্গে দেখা যায় ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান সমর্থকদের। সমর্থকদের প্রশ্ন, প্রতিবাদ ঠেকাতে এত পুলিশ ছিল যখন, ডার্বি এখানেই করা যেতে পারত। তা কেন বাতিল করা হল, প্রশ্ন তোলেন সমর্থকরা। সমর্থকদের পাশে ছিলেন AIFF সভাপতি ও প্রাক্তন ফুটবলার কল্যাণ চৌবে।
এই যুবভারতীর ডার্বির কত ইতিহাস জুড়ে আছে। ডার্বি ম্যাচে নামতে যে কোনও ফুটবলারের পা কাঁপে। দুই সমর্থকদের শব্দব্রহ্মে কতবার উত্তপ্ত হয় স্টেডিয়াম চত্বর। ম্যাচের পর দুই দলের সমর্থকরা একে, অন্যকে আক্রমণ করেছেন। জয়-হারের পর একাধিকবার উত্তপ্ত হয়েছে পরিস্থিতি। ডার্বি হারের পর দুই দলের ফুটবলাররাও সমর্থকদের রোষে পড়েছেন। ১০০ বছরের প্রাচীন এই ডার্বি। বারবার দুই দলের যুদ্ধই সামনে এসেছেয এবার যেন সম্পূর্ণ অন্য সুর। এই প্রথম কাঁধে কাঁধে হাত দিয়ে দুই প্রধানের সমর্থকদের দেখল ময়দান। প্রিজন ভ্যানে দেখা গেল লাল-হলুদ ও সবুজ-মেরুন জার্সির দুই সমর্থককে। এমন দৃশ্য সত্যিই বেনজির বাংলার ময়দানে।
এদিকে বিধাননগর পুলিশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি বন্ধের হুমকির অভিযোগ তুলেছেন এক ইস্টবেঙ্গল সমর্থক। সৌরীশ পাল নামে এক ইস্টবেঙ্গল সমর্থক জানিয়েছেন, তাঁকে একজন ফোন করে হুমকি দেয়, ম্যাচ বাতিল হয়েছে। মাঠে আসবেন না। তাঁদের দাবি, পুলিশের হুমকিতে সমর্থকদের দমানো যাবে না। দুপুর ৩টে নাগাদ, বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মিছিলে হামলার আশঙ্কা পেয়ে তাঁরা ১৪৪ ধারা জারি করেছেন। বিকেল ৪টে থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত জমায়েতে না ঘোষণা করে বিধাননগর পুলিশ। এরপরই সমর্থকরা যেতেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।