কাতার থেকে আজ তিনি অনেক দূরে। হয়তো ঘুমের মধ্যে। হয়তো অন্য চেতনা। মেসি যেমন ৩৬ বছর পর মারাদোনাকে ছুঁলেন। তেমনই এই আর্জেন্টিনা দলের আর এক লিও ছুঁয়ে ফেললেন তাঁকে। সেই লিও, লিওনেল স্কালোনি। আর তিনি, ৩৬ বছর আগে মারাদোনার মাস্টারমশাই কার্লোস বিলার্দো। গত কয়েকদিন অনেক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সেদিনের মতো এখনও মারাদোনার ছায়াতেই রয়ে গিয়েছেন পেশায় চিকিৎসক এই ভদ্রলোক। রবিবার লুসাইল স্টেডিয়ামে তাঁকেই স্পর্শ করলেন চুয়াল্লিশ বছরের লিওনেল স্কালোনি।
সবে এই আর্জেন্টিনা দলকে ধরেছেন একসময় লা-লিগায় ছুটিয়ে ফুটবল খেলা স্কালোনি। পছন্দের জায়গা রাইট ব্যাক, নয়তো রাইট উইং। একবছর আগে তাঁর কোচিংয়ে ২৮ বছর পর কোপা জিতেছিলেন মেসি। আর এবার তাঁর কোচিংয়ে ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ জিতল আর্জেন্টিনা। হ্যাঁ আর্জেন্টিনা। কারণ, মেসি নির্ভরতা কাটিয়ে এবারের কাতারে একটা দল তৈরি করেছেন স্কালোনি। আসলে মেসি পরবর্তী আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এটাই তাঁর ব্ল-প্রিন্ট।
তাই সৌদি আরবের কাছে হারের পরেও নিজের কৌশল থেকে সরে আসেননি। সবরকম ভাবে চেষ্টা করেছেন প্রতি ম্যাচে বৈচিত্র তৈরি করার। জেরার্ডো মার্টিনোর দীক্ষায় দীক্ষিত স্কালোনির কাছে বড় ভরসা ছিলেন মেসি। তাঁর পাশে বাকিদের তৈরি করতে এই কাতারেই আদাজল খেয়ে লড়াই করেছেন। অনেকের তাঁর কোচিং বুদ্ধি নিয়ে কথা তুলেছেন। আবার অনেকে দাবি করেছেন, এ সেই মেসি নির্ভর আর্জেন্টিনা। কিন্তু অভিশপ্ত লুসাইলে শাপমুক্তি ঘটিয়ে স্কালোনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, এই হল তাঁর পরবর্তী প্রজন্মের আর্জেন্টিনা। যেখানে মেসি আছেন। আর আছে টিম আর্জেন্টিনা।
বড় ম্যাচে বড়রাই খেলেন। ময়দানের এই প্রবাদ রবিবাসরীয় কাতারে মিলিয়ে দিলেন স্কালোনি। মেসির পাশে ডি মারিয়ে প্রথম একাদশে একটাই পরিবর্তন। এরপর হয়তো তাঁর ফুটবল বুদ্ধি নিয়ে কোনও প্রশ্ন তোলা যায় না। এমবাপে যতক্ষণ উইংয়ে, ততক্ষণ তাঁর পিছনে পুলিশ ছিলেন রডরিগো ডিপল। সেটাও তাঁর ফুটবল বুদ্ধির নির্দশন হয়ে থাকল।
যাইহোক কথা দিয়েছিলেন মেসির হাতে বিশ্বকাপ তুলে দেবেন। কথা রাখলেন লিওনেল স্কালোনি। একটা মায়াবী রাতে রোমহর্ষক বিশ্বকাপের ফাইনাল। এই ম্যাচ তিনি দেখেছেন কীনা জানা নেই। কিন্তু ৩৬ বছর পর মারাদোনা যেমন প্রাসঙ্গিক, তেমনই ভীষণ ভাবে বাস্তব একটা নাম। তিনি কার্লোস বিলার্দো। আজ লিওনেল স্কালোনিই যেন কার্লোস বিলার্দো।