বেলজিয়াম, স্পেন, পর্তুগাল। গ্রুপ লিগে দুটো বড় টিম। প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগাল। এবার বিশ্বকাপে অপরাজিত ছিল মরক্কো। বুধবার মধ্যরাতে ভেঙে গেল সব রূপকথার জয়যাত্রা। আল বায়েত স্টেডিয়ামে এদিন ৬০ হাজার মরক্কোর সমর্থক হাজির ছিলেন। ১৩ হাজার সমর্থক বাইরেই ছিলেন। যারা মিডিয়া সেন্টারে বসে খেলা দেখলেন। সেই সমর্থকদের চোখের জলে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিল আফ্রিকার প্রথম টিম। তবে হাকিমিরা তৈরি করে গেলেন ইতিহাস।
কাতারের মিডিয়া সেন্টারে কান পাতলেই বারবার শোনা যাচ্ছে, মরক্কো মডেল। মরক্কো ইজ দ্য স্টোরি অব দ্য টুর্নামেন্ট। সেমিফাইনালে শেষ ৫টি ম্যাচে একটা গোল, তাও আত্মঘাতী। সোভিয়েত ইউনিয়ানের কিংবদন্তি গোলকিপার লেভ ইয়াসিনের সঙ্গে তুলনা চলছিল মরক্কোর ইয়াসিন বুনোর। সেমিফাইনালের আগে গোল খাননি তিনি। কিন্তু সবই ব্যর্থ। হাইভোল্টেজ সেমিফাইনালে পায়ের পেশিতে চোট পেয়ে উঠে যেতে হল অধিনায়ক রোমেইন সাইসকে। তারপরই যেন দিশা হারিয়ে গেল। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে খুঁজে পাওয়া গেল না গত ম্যাচের নায়ক এন নাসিরিকে। জাওয়াদ এল ইয়ামিকের ব্যাক ভলিতেও দারুণ সুযোগ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু স্তম্ভ হয়ে ছিলেন হুগো লরিস।
গোটা বিশ্বকাপে মরক্কোর গ্যালারিতে চেনা হুঙ্কার। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে সেই হুঙ্কার ফিরল। কিন্তু ফিরল না হাকিমিদের খেলার গতি। ম্যাচের বয়স তখন ৮০ মিনিট। ২ গোল খেয়েও না হারার মানসিকতা নিয়ে অমানবিক লড়াই লড়ছে মরক্কো। গ্যালারির লালে যেন তখন রক্তিম আভা। কারও চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে। আবার কেউ উত্তেজনায় লাফিয়ে উঠছেন। কেউ গ্যালারিতে মুখ লুকিয়ে বসে আছেন। অন্তত ১টি গোল। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে কোনও গোল না করেই শেষ ম্যাচ।
ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার পর ভেঙে পড়ল গোটা টিম। মাঠে শুয়ে পড়েছিলেন অন্য়তম সেরা ফুটবলার হাকিমি। বন্ধু এমবাপে নিজে এলেন। নিজের জার্সি খুলে দিলেন। নিজে পরে নিলেন লাল জার্সি। এই রাত হয়তো ভোলা যাবে না। যন্ত্রণা, হতাশা গ্রাস করবে মারাকানদের। কিন্তু এই রাত ইতিহাসেরও। আফ্রিকার প্রথম টিম হিসেবে সেমিফাইনালে উঠে যে মডেল তৈরি করে দিলেন, তা ভুলতে পারবে না ফুটবলবিশ্ব।