বিশ্বকাপে নেই ব্রাজিল। কঠিন হলেও বাস্তব। মেসিদের ম্য়াচের আগে লাতিন আমেরিকা ফুটবলের একটি বাতি নিভিয়ে দিল ক্রোয়েশিয়া। কোন নাচ নয়, কোনও উচ্ছ্বাস নয়। শুধু ফুটবল। এই মন্ত্রে বিশ্বের এক নম্বর ব্রাজিলকে আটকে রাখল। তারপর টাইব্রেকারে ডমিনিক লিভাকোভিচ নামের এক যুবকে সামনে দাঁড় করিয়ে দিল। সেইসঙ্গে বারপোস্ট। সবমিলিয়ে কুড়ি বছর পর বিশ্বকাপ জয়ের নেইমারের স্বপ্ন, আপাতত চার বছরের জন্য ঠান্ডা ঘরে চলে গেল। আটতিরিশ বছরের লুকা মদ্রিজ দেখিয়ে দিলেন অতীত নয়, বর্তমানে থাকতে হয় ব্রাজিল। মাঠে নামতে হলে প্ল্য়ান এ,বি, সি পকেটে করে মাঠে নামতে হয়। তাই ১০৬ মিনিটে নেইমারের এই বিশ্বকাপের সেরা গোলে পিছিয়ে পড়ে, এভাবে সেমিফাইনালে ওঠা যায়, সেই বার্তাই দোহার এডুকেশন সিটি স্টেডিয়াম থেকে দিয়ে গেলেন ক্রোটরা। প্রমাণ করলেন কেন ইউরোপ এগিয়ে আছে, আর কেন আলো নিভছে লাতিন ফুটবলের।
দোহার অন্যতম অভিশপ্ত স্টেডিয়াম এডুকেশন সিটি। এই মাঠে পর্তুগাল হেরেছে। নকআউটে মরক্কোর কাছে স্পেন হেরেছে। আর শুক্রবার ব্রাজিলের বিদায় হল। এবার কুড়ি বছরের অধরা বিশ্বকাপ জিততে হটফেভারিট হয়ে কাতারে এসেছিল ব্রাজিল। বিশ্বের এক নম্বর দলে ৯ জন গোলমেশিন। বেশ গর্ব করে বলেছিলেন ব্রাজিল কোচ তিতে। দাবি করেছিলেন গত কুড়ি বছর ব্রাজিলের বিশ্বকাপ না জেতার দায় তাঁর নয়। কিন্তু এবার তো ব্রাজিল সমর্থকরা তো প্রশ্ন তুলতেই পারেন, তা-হলে রাশিয়ার পর কাতার ব্রাজিল ব্যর্থ হল কেন ? ১২০ মিনিটে যেখানে ক্রোটরা ঘন ঘন ফরম্য়াট বদলে ফেললেন, সেখানে ব্রাজিলের খেলায় কোনও বৈচিত্র্য় খুঁজে পাওয়া গেল না কেন ? বরং ফিরে এল ক্যামারুন ম্য়াচের স্মৃতি।
তিতের সামনে প্রশ্ন উঠতে পারে, তাঁর দলে ৯ জন গোল মেশিন আছেন। কিন্তু ঠিক করে গোল চেনেন, তা বোঝা গোল না। যেমন এই ম্য়াচেও রিচার্লিসনের বদলি পেড্রোকে দেখে মনে হল না, তিনি ঠিক ভাবে গোল চেনেন। বড় ম্য়াচে লুকাস পাকুয়েতা একাই দুটি হাফ চান্স নষ্ঠ করেছেন। একটা দক্ষিণ কোরিয়া ম্য়াচ ৪-১ গোলে জয়। পুরো বিশ্বকাপে ২৬ জনকে ফুটবলারকে খেলানো। এই সব গিমিক হতে পারে, ব্রাজিলের ফুটবল নয়। অথচ তেলে সানতানা পরবর্তী সময়ে তিতে একমাত্র কোচ যাঁকে ব্রাজিল ফুটবল পর পর দু বার সুযোগ দিয়েছিল বিশ্বকাপ জেতার জন্য।
২০০২ সালে বিশ্বকাপ জেতার পর কাতারকে ধরলে পাঁচটি বিশ্বকাপ খেলেছে ব্রাজিল। যার মধ্যে চারটি হার কোয়ার্টার ফাইনালে। আর সেই হারের মধ্যে এই ম্য়াচ অবশ্য়ই উপরের দিকে থাকতে পারে। কারণ, এই বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা ম্য়াচ উপহার দিয়েছে ব্রাজিল ও ক্রোয়েশিয়া। আর সেই ম্য়াচ থেকে বিদায় নিয়ে নেইমারের চোখে জল। গোল করলেন, পেলেকে ছুঁলেন। কিন্তু বিশ্বকাপ নেওয়া হল না। ওটা কাতারেই রয়ে গেল। আর রিও ফেরার প্রস্তুতি শুরু করলেন তিতে ও তাঁর ৯ গোল দেখলেই থমকে দাঁড়িয়ে পড়া মেশিন।