ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন গৌতম গম্ভীর৷ IPL-এর ইতিহাসে 'অমরত্ব' পেতে তাঁর প্রয়োজন আর মাত্র একটি জয়। এর আগে কেউ ক্রিকেটার এবং কোচ- দুই ভূমিকাতেই IPL-এর চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি। KKR যদি ফাইনালে জেতে, তাহলে এমনই আশ্চর্য কৃতিত্বের শীর্ষ স্পর্শ করবেন গৌতম। তাও কোথায়? তাঁর ঘোষিত 'শত্রু"র দুর্গ চেন্নাইয়ের চিপক স্টেডিয়ামে।
ভারতীয় ক্রিকেট যাঁরা নিয়মিত অনুসরণ করেন, মহেন্দ্র সিং ধোনি এবং গৌতম গম্ভীরের সম্পর্কের শীতলতা তাঁদের কাছে ওপেন সিক্রেট। অথচ এই দুজনের যুগলবন্দিই ১৯৮৩ সালের পর ভারতীয় ক্রিকেটের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল মুহূর্তের জন্ম দিয়েছে। ২০১১ সালের ওডিআই বিশ্বকাপের ফাইনালে গম্ভীর করেছিলেন ৯৭ রান, ধোনি অপরাজিত ছিলেন ৯১ রানে। গম্ভীরের ঘনিষ্ঠ মহলের অভিযোগ, ধোনির জন্যই গম্ভীর কখনও প্রাপ্য মর্যাদা পাননি৷ বিশ্বকাপ ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ছক্কা হাঁকিয়ে ধোনি ফিনিশ করেছিলেন। সেই দৃশ্য ভারতীয় ক্রিকেটের চিরন্তন লোকগাথায় ঢুকে গিয়েছে৷ অথচ গম্ভীরের ৯৭ নিয়ে তেমন চর্চা হয় কই!
২০১১ সালের ওডিআই এবং ২০০৭ সালের টি২০ বিশ্বকাপ ফাইনালেই টিম ইন্ডিয়ার হায়েস্ট স্কোরারের নাম গৌতম গম্ভীর। টি ২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে করেছিলেন ৫৭ রান। ঝকঝকে ম্যাচ জেতানো অর্ধশতরানও কেউ মনে রাখেনি, এরকম অভিযোগও রয়েছে। যাবতীয় আলোচনার কেন্দ্রে নাকি থাকেন ধোনি৷
ধোনি এবং গম্ভীরের এই টানাপোড়েনে যে কত রং! কত আশ্চর্য সমীকরণ! গম্ভীরের ঘনিষ্ঠজনদের অভিযোগ, ধোনির জন্যই ভারতের অধিনায়ক হতে পারেননি গম্ভীর৷ এই শীতল সংঘাত ছায়া ফেলেছে IPL-এও। KKR-এর বিরুদ্ধে একটি ম্যাচে ধোনি ব্যাট করার সময় মারাত্মক আগ্রাসী হয়ে উঠেছিলেন অধিনায়ক গম্ভীর। চারদিকে ৭/৮ জন ফিল্ডার দিয়ে প্রায় চক্রব্যূহে বন্দি করার মতো ঘিরে ফেলেছিলেন ধোনিকে।
কাকতালীয় হলেও সত্যি, একটানা ব্যর্থতার পর KKR ২০১২ সালে প্রথম IPL জিতেছিল এই চিপকেই৷ 'চিরশত্রু" মহেন্দ্র সিং ধোনির মাঠেই শাহরুখ খানের দলের 'শাপমুক্তি' ঘটিয়েছিলেন গম্ভীর। একটা নুয়ে পড়া, হারতে হারতে ধুঁকতে থাকা দলকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন। এক যুগ পরে সেই চিপকেই ইতিহাসের মুখোমুখি গম্ভীর। এই লড়াই তাঁর কামব্যাকেরও৷ শোনা যায়, KKR-এর সিইও বেঙ্কি মাইসোরের সঙ্গে বনিবনা না হওয়াতেই ২০১৭ সালে তিলোত্তমা ছেড়েছিলেন গম্ভীর৷ তারপর থেকে আর একবারও IPL-এ জেতেনি KKR৷ অবশেষে ফিরে এসেছেন গম্ভীর৷ ফিরে এসেছেন অন্য ভূমিকায়৷ আমূল বদলে দিয়েছেন দলটির শরীরের ভাষা। বদলে দিয়েছেন মানসিকতা। টিমে কিন্তু বিরাট কোনও বদল আসেনি এই মরশুমে৷ বদল একটাই- গৌতম গম্ভীরের আগমন৷ এই বদলে যাওয়া KKR-এ গম্ভীরই এক্স ফ্যাক্টর। গম্ভীর দায়িত্ব পেয়েই বলেছিলেন, এই দলে কোনও সিনিয়র জুনিয়র নেই৷ স্বদেশী বিদেশির ভেদাভেদ নেই৷ লক্ষ্য শুধু একটাই- আইপিএলের ফাইনালে খেলা। গম্ভীর পেরেছেন।
কলকাতা নাইট রাইডার্স ছাড়তে হবে, ভাবতেও পারেননি গম্ভীর,তারপর কখন যেন ভালবেসে ফেলেছিলেন এই কলকাতাকে। গতি হয়ে উঠেছিলেন তিলোত্তমার ঘরের ছেলে। এই শহরে পাকাপাকি একটা ঠিকানা থাকবে না? বাড়ি কিনে ফেলা প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ-ই সব হিসেব বদলে গেছিল সতেরোয়। সাত বছর পর সেই কলকাতায় ফিরে এলেন তিনি৷ এমন এক মুহূর্তের সামনে তিনি দাঁড়িয়ে, যা তাঁকে অমর করে দিতে পারে৷ তাও এমন এক মাঠে, যা তাঁর 'চিরশত্রু'র মৃগয়াক্ষেত্র।