২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর। বর্ষবরণের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে গোটা বিশ্ব। আচমকাই ভয়ংকর খবরে শিউরে উঠল ক্রিকেট বিশ্ব। কারণ সেই রাতেই উত্তরাখণ্ডের রুরকিতে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিলেন ভারতীয় দলের উইকেট কিপার ঋষভ পন্থ।
সেদিন রাতে নিজেই গাড়ি চালিয়ে দিল্লি থেকে দেরাদুন যাচ্ছিলেন পন্থ। পথেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তিনি। দিল্লি-দেরাদুন হাইওয়েতে রুরকির কাছে নারসান বর্ডারে পন্থের গাড়ি ডিভাইডারে ধাক্কা মারে। সঙ্গে সঙ্গে পন্থকে ভর্তি করানো হয় সক্ষম সুপারস্পেশ্যালিটি হাসপাতাল এবং ট্রমা সেন্টারে। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে পন্থকে রাখা হয় দেরাদুনের ম্যাক্স হাসপাতালে।
রিপোর্টে জানা যায়, কপাল, হাঁটু, পিঠ-সহ শরীরের একাধিক জায়গায় আঘাত লেগেছিল ঋষভের। তাঁর সব প্রয়োজনীয় সাহায্যের ভার নিয়েছিলেন বোর্ড সচিব জয় শাহ। এরপরেই বিসিসিআই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে পন্থকে মুম্বই নিয়ে আসা হয়েছিল। সেখানে কোকিলাবেন হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়। বিসিসিআই-এর মেডিকেল টিমের প্রতিনিধিরাও পন্থের শারীরিক অবস্থার তদারকি করেছেন।
এছাড়াও পন্থের চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল বোর্ড। ঋষভ যাতে সেরা চিকিৎসা পান, তা নিশ্চিত করা হয়েছিল বোর্ডের তরফে। এমনকি চিকিৎসার পরবর্তী সময় তাঁর চোট মুক্ত হওয়ার পর্বেও পন্থের পাশে ছিল বোর্ড। এরপর দীর্ঘদিন হাসপাতালে কেটেছে তাঁর। হাঁটার জন্য ক্র্যাচের সাহায্য নিতে হয়েছে। এসবের জন্য ২০২৩ সাল মাঠের বাইরেই কেটেছে পন্থের। ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল, বর্ডার-গাভারকর ট্রফি এই সব টুর্নামেন্ট কেটেছে টিভির পর্দায় চোখ রেখেই।
গোটা একটা বছর জীবনযুদ্ধের লড়াই চালাচ্ছিলেন পন্থ। বার বার খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিল তাঁর নাম। কবে ফিরবেন পন্থ? তিনি নিজেও হয়ত একথাই ভাবছিলেন। অবশেষে আইপিএলের আগে জীবনের মূল স্রোতে ফিরলেন ঋষভ।
ঋষভের উপর ভরসা রেখেছিল দিল্লি। প্রায় ৪৫৪ দিন পর ক্রিকেটের বাইশ গজে ফেরেন ঋষভ। দিল্লি ক্যাপিটালসের অধিনায়কত্বের পাশাপাশি উইকেট কিপিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হল তাঁকে। নিজেকে প্রমাণ করলেন পন্থ। আইপিএলের পর এবার তাঁর উপর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ভরসা রেখেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। বিশ্বকাপ স্কোয়াডের প্রধান উইকেটরক্ষক ঘোষণা করা হয়েছে পন্থকে।
আরও পড়ুন - সুনীল যুগের সমাপ্তি, বিদায়বেলায় 'ফিরে দেখা'
আইপিএলে পাঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে টস করতে নেমে আবেগে ভেসেছিলেন ঋষভ। চোখে জলও দেখা গিয়েছিল তাঁর। জানিয়েছিলেন, এই সময়টা তাঁর কাছে খুব আবেগের। তিনি শুধু ফিরে আসার ওই মুহূর্তটা উপভোগ করতে চেয়েছিলেন। ঋষভ ব্যাট করতে নামলে গোটা স্টেডিয়াম উঠে দাঁড়িয়ে স্বাগত জানায় তাঁর অলৌকিক প্রত্যাবর্তনকে। ঋষভও পরিচিত মেজাজেই ব্যাট করা শুরু করেন। দুর্ঘটনার কোনও প্রভাবই তাঁর আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ছাপ ফেলতে পারেনি।
পঞ্জাবের বিরুদ্ধে এই ম্যাচে ঋষভের ব্যাটে এসেছিল মাত্র ১৮ রান। কিন্তু গোটা আইপিএল মরশুমে তাঁর পারফর্মম্যান্স দেখে চন্দ্রবিন্দুর গানের একটা লাইনই যেন মাথায় ঘুরছিল, এভাবেও ফিরে আসা যায়...।