কিছু জীবন যেন চিত্রনাট্য। নেটফ্লিক্স বা অ্য়ামাজনে না এলে হয়তো জানা যায় না। কিন্তু অলিম্পিক এমন এক মঞ্চ, যেখানে নিজের স্ক্রিপ্ট নিজেরাই তৈরি করেন অ্যাথলিটরা। প্যারিস অলিম্পিকে তেমনই জন্ম নিলেন এক মহাতারকা। ১০০ মিটারের রেসে সব পণ্ডিতদের আগাম ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যে করে দিয়ে সোনা জিতলেন জুলিয়ান আলফ্রেড। ২৩ বছরের এই অ্যাথলিট ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের মঞ্চে ইতিহাস তৈরি করলেন।
ক্যারিবিয়ান প্রদেশের ছোট্ট দেশ সেন্ট লুসিয়া। আগ্নেয়গিরি থেকে সৃষ্টি হয়েছে বেশ কিছু সমুদ্রতট। উত্তর আমেরিকায় পাহাড় ও সৈকতের মোড়া এই প্রদেশের জনসংখ্যা মাত্র ১ লক্ষ ৮০ হাজার। এই দেশ বিখ্যাত নোবেল পুরস্কারের জন্য। বিশ্বের সবথেকে বেশি নোবেল জয়ী আছে এই দেশ থেকেই। এর আগে কখনও অলিম্পিকে পদক জেতেনি সেন্ট লুসিয়া। কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি এই দেশ অলিম্পিকে সোনা জিতবে। মাত্র ১২ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছেন। টেক্সাসের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেন জুলিয়ান। অ্যাথলিট হওয়ার স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরে রেখে বড় হওয়া। ৬০ মিটারে প্রথম সাফল্য। বিশ্বের সেরা ৩০ দ্রুততম মানবীর স্বীকৃতি পান। এরপর আন্তর্জাতিক মঞ্চে কমনওয়েলথ গেমস। ব্রিমিংহ্যামে ১০০ মিটারে রুপো জিতলেন। আর এবার প্যারিসে অলিম্পিকে দেশকে এনে দিলেন সোনা। ১০০ মিটার শেষ করলেন ১০.৭২ সেকেন্ডে। আর প্যারিসে জন্ম হল বিশ্বের দ্রুততম মানবী, এক নতুন তারা জুলিয়ানের। তাঁর স্বপ্ন, উসেইন বোল্ট। বোল্টের মতোই হতে চান তিনি।
বাইবেলের অন্যতম চরিত্র। ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী, মহাপ্লাবনের সময় নোয়ার নৌকায় রক্ষা পায় মানবকূল। এবার প্যারিস অলিম্পিকে নজির গড়লেন আরও এক নোয়া। তিনি আমেরিকার নোয়া লাইলেস। সময় নিলেন ৯.৭৯ সেকেন্ড। তৈরি হল আরও এক ইতিহাস। উসেইন বোল্টের ৯.৫৮ সেকেন্ডের রেকর্ড ভাঙেনি ঠিকই। কিন্তু সবথেকে কম ব্যবধানে জয় পান এই অলিম্পিকের দ্রুততম মানব নোয়া লাইলেস।
নোয়ার পেশাদার কেরিয়ার শুরু প্রায় ৮ বছর আগে। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে তাঁর ৬টি সোনা ও একটি রুপো আছে। ডায়মন্ড লিগেও আছে ৫টি সোনা। টোকিও অলিম্পিকে ২০০ মিটারে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন তিনি। এবার প্যারিসে তৈরি করলেন ইতিহাস। ক্ষুদ্রতম ব্যবধানে শেষ করে সোনা জিতলেন।
প্যারিসে ১০০ মিটার রেসে যে নাটকীয় মঞ্চে তিনি সোনা জিতলেন, তার কোনও তুলনাই বোধ হয় দেওয়া যথেষ্ট নয়। চোখের পলক পড়ার থেকেও কম সময়ে সোনা ও রুপো জয়ের ব্যবধান। বিশ্বের সেরা ৮ অ্যাথলিট প্রায় একই সঙ্গে লাইন ক্রস করেছিলেন। সবথেকে কাছাকাছি ছিলেন নোয়া লাইলেস ও কিশানে থম্পসন। দুই অ্যাথলিটই শেষ করলেন ৯.৭৯ সেকেন্ডে। কীভাবে বাছা হল চ্যাম্পিয়ন! এক সেকেন্ডের ৫০০০ ভাগ করা হয়। সেই হিসেবে দেখা যায়, সব দিক থেকে এগিয়ে ছিলেন নোয়া। থম্পসনের পা আগে দাগে পড়েছিল। কিন্তু তাঁর শরীরের অন্য অংশ অনেকটাই দূরে ছিল। এই নিয়ম অনুযায়ী, সোনা জিতে নিলেন নোয়া।