বারবার অলিম্পিকের মঞ্চে তাঁর লিঙ্গ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে । বারবার শুনতে হয়েছে, তাঁর শরীর পুরুষদের মতো । অভিযোগ উঠেছে, তিনি জিনগতভাবে পুরুষ এবং রূপান্তরকামী । এতদিন চুপ ছিলেন । শুধু সোনা জেতার স্বপ্ন দেখেছিলেন । আর নিজের লক্ষে স্থির থেকে করে গিয়েছেন কঠোর অনুশীলন । সফলতা এসেছে । প্রথম মহিলা হিসেবে দেশকে সোনা এনে দিয়েছেন আলজেরিয়ার বক্সার ইমানে খেলিফ । তারপরই যাবতীয় বিতর্ক নিয়ে নীরবতা ভাঙলেন ২৫ বছরের বক্সার । অলিম্পিকের মঞ্চ, গলায় স্বর্ণপদক, সবাইকে দৃপ্ত কণ্ঠে বললেন তিনি একজন নারী । আর সাধারণ পাঁচটা মেয়ের মতোই তিনি একটি মেয়ে । বাকি মেয়েদের মতোই তাঁর জীবন যাপন ।
বর্তমানে প্রযুক্তি নির্ভর যুগ । সময় এগোচ্ছে, আরও মর্ডান হচ্ছে মানুষ । কিন্তু, চিন্তাধারা এখনও সেকেলে । যেমন, এখনও বক্সিং হোক বা কুস্তি...এসব ক্ষেত্রে মেয়েদের অংশগ্রহণ, সমাজ বাঁকা চোখেই দেখে । আলজেরিয়ার ইমানেকেও অনেক কটাক্ষ সহ্য করতে হয়েছিল । কিন্তু, সব বাঁধা অতিক্রম করে প্যারিস অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেন । সেখানেও আবার লিঙ্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন । তাঁর বিপক্ষে খেলার সময় ইতালির অ্য়াঞ্জেলা কারিনি-র নাকে লেগেছিল । ম্যাচ শেষ না করেই বেরিয়ে গিয়েছিলেন রিং থেকে । অভিযোগ করেছিলেন, ইমানের একটা পাঞ্চে তাঁর নাক থেকে রক্ত বেরচ্ছিল, নাকের হাড় ভেঙে গিয়েছে বলে সন্দেহ করা হয় । তাঁর দাবি ছিল, প্রাণ বাঁচানোর জন্য তাঁকে রিং ছাড়তে হয়েছে । সেইসঙ্গে আয়োজকদের একহাত নিয়ে কারিনি ইমানের লিঙ্গ নিয়ে প্রশ্নও তোলেন ।
সোনা জেতার পরই এই বিষয়ে ইমানে খেলিফ বলেন, 'আমিও আর পাঁচটা মহিলার মতোই একজন মহিলা । আমি জন্মেছি মহিলা হিসেবে, বড় হয়েছি মহিলার মতো । কিন্তু অনেক শত্রু আছে আমার, যারা এই সাফল্য সহ্য করতে পারছে না । অবশ্য এটাও আমার সাফল্যের আলাদা একটা স্বাদ এনে দেয় । আমাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় যেসব কথা বলা হচ্ছে সেগুলো যুক্তিহীন ।'
শুধু প্যারিস অলিম্পিক নয়, এর আগে ২০২৩ সালে বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের সময় তাঁর নমুনায় মহিলাদের সঙ্গে জিনগত পার্থক্য ধরা পড়ে । সেইসময় তাঁকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল । সেই প্রসঙ্গ তুলেছেন ইমানে । তিনি বলেন, 'ওঁরা আমাকে ঘৃণা করে, কিন্তু কেন তা জানি না । আমি এই জয়, এই মেডেলের মধ্যে দিয়ে তাঁদের একটা বার্তা দিতে চাই যে, সম্মানই হল আসল ।