১২ বছর আগে যখন কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপ হওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল, বিতর্কের সূত্রপাত তখন থেকেই।
বিতর্ক একাধিক বিষয় নিয়ে। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ কাতারের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার সুযোগ ছিনিয়ে নেওয়ার মারাত্মক অভিযোগ উঠেছিল। তার সঙ্গেই উঠে এসেছিল মানবাধিকার নিয়ে বিতর্কও। যা, এক যুগ পেরিয়ে যাওয়ার পর এখনও রয়েছে। বিশেষ করে ইউরোপের বহু ফুটবলপ্রেমী কাতার বিশ্বকাপকে বয়কট করেছেন এই একটি কারণে।
এছাড়াও রয়েছে তুমুল দুর্নীতির অভিযোগও।
ঘুষ নিয়ে কাতারকে বিশ্বকাপের আয়োজকের দায়িত্ব পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন স্বয়ং মিশেল প্লাতিনি। নেটফ্লিক্সের ডকুমেন্টারি সিরিজ 'ফিফা আনকভারড'-এ খুব স্পষ্টভাবে দেখানো হয়েছে কীভাবে দুর্নীতিতে ছেয়ে গিয়েছিল বিশ্ব ফুটবলের গভর্নিং বডি। দুর্নীতির পরিমাণ এতটাই ছিল যে, ফিফার ২২ জন এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্যদের মধ্যে ১১ জনেরই হয় জরিমানা বা সাসপেন্ড নতুবা কারাদণ্ড আর চিরকালের মতো ফিফা থেকে নির্বাসন হয়।
বিশ্ব ফুটবলে অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করে থাকে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)। কাতার বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার পরই ২০২০ সালে চাঞ্চল্যকর এক তথ্য জানায় সংস্থাটি। তাতে অভিযোগ করা হয়, ঘুষ দিয়ে বিশ্বকাপের আয়োজক স্বত্ব পেয়েছে ধনী দেশ কাতার। অভিযোগপত্রে বলা হয়, আয়োজক নির্ধারণে ফিফার নির্বাহী কমিটির কয়েকজন সাবেক সদস্য ঘুষের প্রস্তাব পান। সেই প্রস্তাব তারা গ্রহণ করে কাতারের পক্ষে ভোট দেন। যদিও এমন অভিযোগ বরাবরই উড়িয়ে দিয়েছে কাতার।
অন্য আরও একটি দিকও রয়েছে।
বিশ্বকাপের ঝাঁ-চকচকে প্রদীপের নিচের অন্ধকারে চাপা পড়ে আছে শত শ্রমিকের আর্তনাদ। ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান দাবি করেছে, বিশ্বকাপের বিভিন্ন প্রকল্পে গত এক দশকে প্রাণ হারিয়েছেন দক্ষিণ এশিয়ার কয়েক হাজার শ্রমিক।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর এক অতি-সমালোচিত শ্রমিক-নীতি হল কাফালা সিস্টেম। এ প্রক্রিয়ায় প্রত্যেক অভিবাসী শ্রমিকের একজন স্পনসর থাকে, যিনি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেই শ্রমিকের মালিক। যার ফলে শ্রমিককে ইচ্ছেমতো খাটানো অর্থাৎ অত্যাচার করা সহজ হয়ে যায়। কাতারে যেহেতু একজিট ভিসার ব্যবস্থা রয়েছে, আর তাই ভিসা কেড়ে নিলে কেউই স্বদেশে ফিরতে পারবেন না। তাছাড়া নানারকম আইনি প্যাঁচে ফেলে শ্রমিকদের তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করাও অনেক সহজ হয়ে যায়।