স্বপ্নে আমরা মাঝে মধ্যেই প্রিয় মানুষকে দেখি, তাঁদের সঙ্গে কথা হয়। ঘুম ভাঙলে বুঝি, সত্যি ছিল না। আচ্ছা, যদি সত্যিই হয়? যার সঙ্গে কথা বলতে চাইছি, স্বপ্নেই যদি যোগাযোগ করা যেত? এবার যাবে!
এ তো ঠিক সেই বিখ্যাত হলিউড ছবি যেন! ক্রিস্টোফার নোলানের ইনসেপশন'। সেখানে মানুষে মানুষে স্বপ্নে যোগাযোগ হয়ে যেত, অবচেতনে। শুধু আর কল্পবিজ্ঞানে সত্যি হবে না এই স্বপ্নের যোগাযোগ। বাস্তবেও, সম্ভব।
ক্যালিফোর্নিয়ার একদল বিজ্ঞানী দুজন মানুষকে স্বপ্নে স্বপ্নে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছেন! REMspace, ক্যালিফোর্নিয়ার একটি স্টার্টআপ ঘুম এবং স্বপ্ন নিয়ে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে। ঘুমের REM অর্থাৎ র্যাপিড আই মুভমেন্টের সময় লুসিড ড্রিমিং হয়, অর্থাৎ স্পষ্ট মনে থাকে, এবং আমরা আমাদের স্বপ্ন বেশ খানিকটা নিয়ন্ত্রণও করতে পারি।
ডেইলি মেলে প্রকাশিত হওয়া প্রতিবেদন জানাচ্ছে, এই পরীক্ষাটি ২৪ সেপ্টেম্বর করা হয়েছিল। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী দুজন ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, তখন দুজনের মস্তিস্কের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে বিশেষ একটি ডিভাইস, দুজনের মগজে কী চলছে, তা পর্যবেক্ষণ করার জন্য। স্বপ্নের ঠিক কোন দশায় পৌঁছচ্ছেন তাঁরা, সেদিকেও নজর রাখা হয়েছিল।
প্রথম অংশগ্রহণকারী যখন লুসিড ড্রিমে প্রবেশ করেছেন, তখন সেই ডিভাইসে ধরা পড়েছে তা। তার মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ, এবং কী বলতে চাইছেন তিনি, তা পড়ে ফেলছে ওই ডিভাইস, এবং সেই বার্তা পাঠানো হচ্ছে দ্বিতীয় অংশগ্রহণকারীকে। দুজনের কানেই ঘুমের সময়ে পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল বিশেষ প্রযুক্তির ইয়ারবাডস।
ঘুমের বিজ্ঞান বোঝার জন্য কিন্তু এই গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু স্বপ্নে স্বপ্নে মানুষের যোগাযোগ ঘটিয়ে এই প্রযুক্তি থেমে থাকবে, ভাবলে ভুল করছেন। REMspace আশাবাদী, ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি দ্বারা মানসিক অসুস্থতার চিকিৎসা করাও সহজ হয়ে উঠবে। তবে REMspace ছাড়াও অন্য সংস্থা এই প্রযুক্তি ব্যবহারে সফল হলেও তা সম্ভব হবে।
REMspace-এর সিইও মাইকেল রাদুগা অবশ্য খালি চোখেই অনেকটা স্বপ্ন দেখে ফেলেছেন। তিনি বলছেন, আগামী দিনে হয়তো এই প্রযুক্তি ছাড়া আমরা একটা মুহূর্তও চলতে পারব না। যোগাযোগ বা কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী বদল আনতে চলেছে এই প্রযুক্তি, দাবি তাঁর।
আমরা কথায় কথায় বলি, 'স্বপ্নের মতো সুন্দর'। কিন্তু আদতেই কি স্বপ্ন মানেই সুন্দর? একেবারেই নয়। ভালো স্বপ্ন যেমন আছে, ঠিক তেমনই ঘুমের মধ্যে চুপিসারে হানা দেয় ভয়াল, ভয়ঙ্কর সব স্বপ্ন। আমরা শিউড়ে উঠি আতঙ্কে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিনের পর দিন যদি ভয়ের স্বপ্ন দেখতে থাকেন, তাহলে কিন্তু বিষয়টা রীতিমতো গুরুতর। একেবারেই অবহেলা করার মতো নয়।
যদি দিনভর খুব ভয়াল কিছু নিয়ে ভাবনাচিন্তা করি, তাহলে তার প্রভাবে রাতে ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখাটা অস্বাভাবিক নয়। তা ছাড়াও প্রবল উদ্বেগ, কাজের চাপ, স্ট্রেস এসব থেকেও ভয়ের স্বপ্ন দেখতে হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাতে ভয়ের স্বপ্ন দেখার পিছনে অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে কোনও বিষয় নিয়ে চিন্তা করা। আমরা যদি কোনও কারণে উদ্বিগ্ন থাকি বা কোনও ব্যক্তিকে নিয়ে চিন্তা করি সারাদিন, তাহলে প্রভাব পড়তে পারে ঘুমে।
ঘুমের মধ্যে নিয়মিত ভয়ের স্বপ্ন দেখা কিন্তু এক ধরণের অসুখ। ডাক্তারি পরিভাষায় প্যারাসমনিয়াও বলা হয়ে থাকে। চিকিৎসকদের মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সারাদিনে অন্তত ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুম অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু যখনই ঘুম পর্যাপ্ত পরিমাণে হয় না, তখনই মস্তিষ্ক ক্লান্ত হতে শুরু করে। বিভিন্ন বিষয়ে গোলমেলে চিন্তা হানা দেয় মগজে৷ ঘুমের মধ্যে ভয়ের স্বপ্ন দেখার পিছনে এটাও একটি কারণ।
স্বপ্ন নিয়ে কথা বলতে গেলে সিগমন্ড ফ্রয়েডের কথা আসবেই। স্বপ্ন নিয়ে তিনি দীর্ঘ গবেষণা করেছেন। ফ্রয়েডের মতে, স্বপ্ন হল ‘মানসিক ক্রিয়া, প্রতিক্রিয়ার ফসল’। ফ্রয়েড মানব-মনকে সচেতন, অর্ধচেতন এবং অবচেতন— এই তিন ভাগে ভাগ করেছিলেন। তাঁর মতে, ঘুম হল জীবনের অপরিহার্য প্রক্রিয়া বা মানসিক অবস্থা। এই অবস্থায় মানুষের অবচেতন মন, আগে ভাবনাচিন্তা করা বিষয়গুলি বা পুরনো ঘটে যাওয়া ঘটনাক্রম দেখে থাকে। কেমন হয় সেই দেখা? অনেকটা সিনেমার পর্দায় ফেলা আলোকিত ছবির মতো। এবং মানুষ তখন এই প্রক্রিয়াটিকে আসল বলে মনে করেন।