বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠানোর প্রস্তাবকে এবার গুরুত্ব দিয়ে দেখা শুরু করল দিল্লি। কূটনৈতিক মহলের মতে, বাংলাদেশ সীমান্ত লাগায়ো পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রস্তাবকে একেবারে ফেলে দিতে চায় না সুহ্মামনিয়ম জয়শঙ্করের মন্ত্রক। কারণ, মমতার রাষ্ট্রসংঘের প্রস্তাবে জোড়া চাপ দেখতে পারছেন বিদেশমন্ত্রকের বিশেষজ্ঞরা। কারণ, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের স্বার্থরক্ষার ব্যাপারে ঢাকাকে বারবার সক্রিয় হতে অনুরোধ করা হচ্ছে। কিন্তু দিল্লির এই অনুরোধ কতটা রাখছে ঢাকা, তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যাচ্ছে।
বঙ্গ বিধানসভার শীত অধিবেশনে দাঁড়িয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী জানান, চাইলে বাংলাদেশ থেকে তিনি অত্যাচারিতদের ফিরিয়ে আনতে পারেন। কিন্তু তিনি চান এই ইস্যুতে সক্রিয় হোক কেন্দ্র। তাই বাংলাদেশে রাষ্ট্রসংঘের অনুমতি নিয়ে কেন্দ্রেকে শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠানোর আর্জি জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কূটনৈতিক মহলের দাবি, বাংলার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মমতার শান্তি সেনা পাঠানোর প্রস্তাবে কার্যত বিপাকে বাংলাদেশ। তাই তড়িঘড়ি করে প্রতিক্রিয়া দিতে হয়েছে বিদেশমন্ত্রককে। মুখপাত্র তৌহিদ হাসান জানিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বক্তব্যকে তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধরনের হিসাবেই দেখতে চান। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন এমন মন্তব্য করলেন, তা তাঁরা জানেন না। তবে ব্যক্তিগত ভাবে বলতে পারেন, তাঁর রাজনীতির জন্য বিষয়টি ঠিক হয়নি। পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখতে চায়। সরকারে না থেকেও মমতা রাষ্ট্রসংঘ মন্তব্য নিয়ে কার্যত একই প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল বিএনপি-র।
যদিও, বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর রাষ্ট্রসংঘের প্রস্তাবকে মিশ্র ভাবেই দেখছেন বঙ্গ বিজেপির নেতারা। প্রাক্তন সাংসদ দিলীপ ঘোষের দাবি, এই ব্যাপারে কেন্দ্র কী করবে, তা কেন্দ্রের উপরেই ছেড়ে দেওয়া উচিত। একইসঙ্গে বাংলার হিন্দুদের স্বার্থ যাতে রক্ষা থাকে, সেই দিকটিও বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকেই দেখতে হবে।
তবে, কূটনৈতিক এই চাপান-উতোরে মধ্যেই বাংলাদেশে কিন্তু হিন্দুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ অব্যাহত। কলকাতায় ইসকনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট রাধারমন দাস টুইট করে জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম আদালতে চিন্ময়কৃষ্ণের জামিন শুনানির আগেই এবার আক্রান্ত তাঁর আইনজীবী রমেন রায়। তাঁকে গুরুতর অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছে বাংলাদেশের একটি হাসপাতালে। সেই ছবিও নিজের টুইট পোস্ট করেছেন ইসকনের ভাইস প্রেসিডেন্ট। বেশ কয়েকটি মহল থেকে এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
উত্তেজনা দেখা দিয়েছে ত্রিপুরার আগরতলাতেও। অভিযোগ, সেখানে বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। এমনকী, ত্রিপুরার হোটেলে বাংলাদেশিদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন সেখানকার হোটেল ব্যবসায়ীরা।