জুলাই ছাত্র আন্দোলনের হাত ধরে শেখ হাসিনা সরকারের পতন। অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন। ২৬ মার্চ ২০২৫, নতুন সরকারের আমলে দেশের স্বাধীনতা দিবস কেমন কাটল! শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে মুক্তিযুদ্ধ। সেই মুজিবরের মূর্তিই ভেঙে ফেলেছে মানুষ। এবার স্বাধীনতা দিবস কেমন কাটবে! তা নিয়ে চাপা উত্তেজনা ছিল। মোটের উপর শান্তিপূর্ণভাবেই পালিত হয়েছে স্বাধীনতা দিবস। তবে আওয়ামী লীগ তাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করেছে, ৭১-এর স্বাধীনতা দিবসের সঙ্গে ২০২৪-এর তুলনা করা হয়েছে। যা একেবারেই সমীচীন নয়। পাশাপাশি, ঢাকার রাস্তায় এই স্বাধীনতা দিবসকে খিলাফত দিবস বলারও চেষ্টা করেছে বেশ কিছু সংগঠন। সব মিলিয়ে দিনভর সরগরম থাকল বাংলাদেশ।
স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ। এবছর এই দিনটি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চরম তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। প্রথমবার স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশের বাইরে ছিলেন শেখ হাসিনা। ১৯৭১ সালে শেখ মুজিবর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। এরপর ৯ মাসের যুদ্ধে বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারান।
এবার অন্তর্বর্তী সরকারের সেই স্বাধীনতা দিবস পালনে ৩১ বার তোপধ্বনি দেওয়া হল। জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন মহম্মদ ইউনূস। ঢাকার রাস্তায় উৎসবে মাতল মানুষ। কিন্তু কোথাও যেন চাপা উত্তেজনা। সব থেকেও কিছু যেন নেই। গত বছরের অস্থিরতার পর ইউনূসের নেতৃত্বে এই অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসেছে। ইউনূস স্বাধীনতা দিবসে কী বলেন, তা নিয়ে নজর ছিল গোটা বিশ্বে। ইউনূস জানিয়েছেন, "এটা নতুন বাংলাদেশ গড়ার সময়।" বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করা, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা নিয়েই কাজ করছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতা দিবসে তাই চিনে উড়ে গেলেন মহম্মদ ইউনূস।
চিন ও পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে ব্যাপক চর্চা চলেছে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হওয়ার পরই প্রতিবেশী দুই দেশের সঙ্গেই সম্পর্ক মজবুত করেছে বাংলাদেশ। আমেরিকার সঙ্গেও এখন কূটনৈতিক সম্পর্ক ভাল নয়। তাই চিনকেই পাশে পাবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ।
জুলাই আন্দোলনের পর ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক অবনতি হয়েছে। বাংলাদেশে ভারত বিরোধিতা চরম পর্যায়ে চলে গিয়েছে। প্রাক্তন প্রাধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া, তা আরও চরম আকার ধারণ করেছে। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে যে ভারতীয় সেনা, বাংলাদেশের পাশে দাড়িয়েছিল, আজ তারাই অচ্য়ূত। তিস্তাচুক্তি, সীমান্ত উত্তেজনা, একাধিক ইস্যুতে সম্পর্কে টানাপোড়েন রয়েছে। তবে ভারতের বিদেশমন্ত্রক এই কঠিন সময়েও বাংলাদেশকে বারবার ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে। ইউনূস সরকারও চিনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে ঠিকই। কিন্তু ভারতের সঙ্গে আলোচনার দরজাও খোলা রাখছে। কূটনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশ মুখে যাই বলুক, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রাখলেই ব্যালান্সিং গেম হবে।
গত বছর জুলাইয়ে ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন হাসিনা সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিল। অন্য়ান্য় দেশের সঙ্গে সম্পর্ক যাই হোক না কেন, বাংলাদেশ যেন নিজেই ভাল নেই। বারবার একাধিক ইস্য়ুতে উত্তপ্ত হয়েছে বাংলাদেশ। ঢাকা, ধানমুন্ডি, রাজশাহী, চট্টগ্রামে আওয়ামী লিগের নেতাদের উপর হামলা করা হয়েছে। বারবার গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে প্রতিবেশী দেশে। তবে স্বাধীনতা দিবসে এটাই আশা, ইউনূস সরকার নতুন পথ খুঁজে পাবে। নতুন আলো দেখবে বাংলাদেশ। ধর্ম, রাজনীতি, বিভেদ ভুলে ভারতের সঙ্গেও সুসম্পর্ক গড়ে উঠবে। সেটাই যেন চাইছেন দুই দেশের লক্ষ লক্ষ স্মৃতিবিজড়িত মানুষও।