ভারত সফরে আসছেন রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। জানিয়েছেন রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সার্গে লাভরভ। ভারত সফরের প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছেন পুতিন। ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধের পর প্রথমবার ভারতে আসছেন রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট।
আমেরিকার সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক ভাল নয়। বাণিজ্য় শুক্ল, অবৈধ অভিবাসন, ফান্ডিংয়ের মতো একাধিক ইস্য়ু নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে ভারতের চাপানোতর চলছে। ভারতের বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে, এখনও কূটনৈতিক স্তরে তাদের আমেরিকার সঙ্গে আলোচনা চলছে। এরই মধ্যে আমেরিকার নতুন বন্ধু রাশিয়ার সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক মজবুত করতে চাইছে ভারত। সম্প্রতি ইউক্রেন নিয়ে একই টেবিলে বসেছে আমেরিকা ও রাশিয়া। দুই দেশ একাধিক চুক্তি করতেও রাজি হয়েছে। পুতিনের প্রশংসা করেছেন আমেরিকার নয়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পুতিনও আমেরিকাকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছে। মনে করা হচ্ছে, রাশিয়ার কাছাকাছি এসে আমেরিকার সঙ্গেও সম্পর্ক মজবুত করতে চাইছেন ভারতীয় কূটনীতিবিদরা।
একটি ভিডিয়ো বার্তায় রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সার্জে লাভরভ জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর প্রথম রাশিয়ায় এসেছিলেন। তখনই পুতিনকে ভারতে আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে আসেন তিনি। এবার পুতিনের ভারত সফরের জন্য় প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া। তবে কবে আসছেন, তা কিন্তু নির্দিষ্টভাবে জানায়নি রাশিয়া। মনে করা হচ্ছে এই সফরে একাধিক সামরিক ও বাণিজ্যিক চুক্তি হবে দুই দেশের।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। ইউক্রেনের উপর হামলা চালায় রাশিয়া। গোটা বিশ্ব রাশিয়ার নিন্দা করে। তবুও আগ্রাসন নীতিকেই প্রাধান্য় দেয় রাশিয়া। আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ন্য়াটো শক্তির সঙ্গে মিলিত ভাবে রাশিয়ার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেননি। ইউরোপের দেশগুলিও এর বিরোধিতা করে। সেই সময় ভারতের অবস্থান কিন্তু নিরপেক্ষ ছিল। তারা বারবার দুই দেশকে একই টেবিলে বসিয়ে আলোচনার পক্ষে সওয়াল করেছে। কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের পথ বন্ধ করেনি ভারত। বছরে দুই দেশের মধ্যে ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্য়বসা হয়। রাশিয়াকে কিন্তু যুদ্ধ নিয়ে কখনও সরাসরি আক্রমণ করেনি ভারত। ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কির সঙ্গে যখন দেখা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, তখন তিনি জানান, ভারত যুদ্ধের পক্ষে নয়। শান্তির মাধ্যমেই সমাধান চায় ভারত। দুই দেশের নেতাদের সঙ্গে দেখা করে নিজেদের মধ্য়স্থতাকারী হিসেবে দেখাতে চেয়েছে ভারত। শুধু এখানেই নয়, রাষ্ট্রসঙ্ঘেও কিন্তু রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দেয়নি ভারত। পাশাপাশি গত তিন বছর যুদ্ধের সময় ইউক্রেনে ক্রমাগত সাহায্য়ও করে গিয়েছে ভারত। একই সঙ্গে রাশিয়ার থেকেও তেল, অন্য়ান্য় পণ্য় আমদানী করেছে। কূটনৈতিক স্তরে নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছে ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক।
এতদিন পর এবার নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে ভারত সফরে আসছেন পুতিন। কিন্তু এই সফর ঘিরে অনেকগুলি প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে। সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে এসেছিলেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল। আমেরিকা-রাশিয়া বৈঠকের পর ভারতের মতো বড় শক্তিকে কাজে লাগাতে চাইছিল ইউরোপও। ভারতের একাধিক মন্ত্রকের সঙ্গে বৈঠকও হয় ওই প্রতিনিধি দলের। এরই মধ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভারত সফরে এলে সেই সমীকরণ ফের বদলে যাবে। রাশিয়ার কাছাকাছি এলে কি ভারতকে বেশ কিছু ছাড় দেবে আমেরিকা! সম্প্রতি আমেরিকার রিলিজিয়াস ফ্রিডম প্য়ানেল জানিয়েছে, ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা RAW-কে নিষিদ্ধ করা হোক। তা নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে গোটা দেশে। আমেরিকা কেন চাইছে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থাকে নিষিদ্ধ করা হোক! এই নিয়ে বেশ বিরক্ত ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক। এক্স প্ল্য়াটফর্ম পোস্ট করে তা জানিয়েছে মন্ত্রক। এরই মধ্যে রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট পুতিন ভারতে এলে, ফের বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন করে সমীকরণ তৈরি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে আমেরিকা ধীরে ধীরে ভারতের উপর নমনীয় মনোভাব দেখাচ্ছে। ২ এপ্রিল থেকে চিন, মেক্সিকো, কানাডার উপর শুল্কের বড় বোঝা চাপিয়েছে ট্রাম্প সরকার। তবে ভারতের উপর বড় শুল্কের বোঝা চাপাতে চাইছে না আমেরিকা। এমনই জানিয়েছেন এক মার্কিন বাণিজ্য়কর্তা। ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, যে দেশ যত শুল্ক নেবে, তাদের তত পরিমাণ শুল্ক চাপানো হবে। তবে কিছু দেশকে সে ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে। ভারতও সেই তালিকায় থাকতে পারে। যদিও ট্রাম্প নিজে ভারতের শুল্কনীতি নিয়ে সরাসরি আক্রমণ করেছিলেন। বুধবার ভারত-আমেরিকার প্রতিনিধি স্তরে বাণিজ্য় বৈঠক শুরু হয়েছে। ওই বৈঠকেই মার্কিন প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, আমেরিকার আসল লক্ষ্য়, সেই দেশের অটোমোবাইল, হুইস্কি, কৃষিপণ্য়কে ভারতীয় বাজারে ঢোকার পথকে সুগম করতে চান। তাই ভারতকে শুল্ক কমাতে বাধ্য করতে চাইছে আমেরিকা। কিন্তু সব দেশের ক্ষেত্রেই যে তা হবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই।