কেন চায় ? কী ভাবে চায় ? কারা চান ? কোন পরিস্থিতিতে উঠছে এই দাবি ? - এই প্রশ্নগুলোই এখন ভাবাচ্ছে বাংলাদেশের সংবিধান বিশেষজ্ঞদের। উপদেষ্টা সরকার গঠনের পরেও এখনও শান্তি ফেরেনি বাংলাদেশে। মাঝে মধ্যেই দ্রোহের আগুনে জ্বলছে ঢাকা-সহ দেশের একাধিক জেলা। এরমধ্যেই, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের একটি দাবিতে নতুন করে শুরু হয়েছে আন্দোলন। এই আন্দোলনকে সামনে রেখেই সামনে এসেছে বাংলাদেশের নতুন সংবিধান লেখার দাবি।
দেশের প্রধানমন্ত্রী পদে পদত্যাগ করেননি শেখ হাসিনা। সম্প্রতি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের এই দাবি ভস্মে ঘি ঢেলেছে বলেই দাবি সে দেশের রাজনৈতিক মহলের। তাঁদের মতে, যে পথে এগোচ্ছে এই দেশ, তাতে হাসিনাকে নিয়ে রাষ্ট্রপতির এই দাবির প্রয়োজন ছিল না। যার জেরেই কিন্তু আরও জোরাল হয়েছে রাষ্ট্রপতির পদে সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবি।
শুধু রাষ্ট্রপতির অপসারণ নয়, এর সঙ্গেই বৈষ্যম-বিরোধী ছাত্রজোটের দাবিতে উঠে এসেছে সংবিধান বদলের কথাও। যা চিন্তায় ফেলেছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলকে। কারণ এই দাবি বিশ্লেষণে এখন আড়াআড়ি ভাগ হয়েছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা জানিয়েছেন, এই দাবি ছাত্র সমাজ জানাতেই পারে। কিন্তু তা কী ভাবে বাস্তবায়িত হবে, সেই ফর্মূলা তাঁদেরই দিতে হবে।
ছাত্র জোটের নেতা হাসনাত আবদুল্লা জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালে সংবিধান তাঁরা মানেন না। নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে হলে প্রয়োজন নতুন কিছু ভাবনা। আর সেই ভাবনা শুরু হয়েছে চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে। ওই নেতার দাবি, তাঁদের গণঅভ্যুত্থানেই পতন হয়েছিল দেশের সবচেয়ে বড় দুর্নীতিগ্রস্থ সরকারের। কিন্তু তাঁদের আন্দোলন এখনও শেষ হয়নি। সরকার পতন হয়েছে, কিন্তু নতুন বাংলাদেশ এখনও তৈরি করা হয়নি। তিনি বলেছেন, “আমাদের বিপ্লব শেষ হয়ে যায়নি। আমরা পাঁচই অগাস্ট শেখ হাসিনাকে উৎখাত করতে পারলেও এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করতে পারিনি”।
হাসনতের মতে, এই দাবি শুধু তাঁদের নয়। এই দাবি বাংলাদেশের। সেই কারণে, গত চার জুলাইয়ের এই আন্দোলনকে নথিভুক্ত করতে চান তাঁরা। সংবিধান বদলের পাশাপাশি পাঁচ দফার দাবিতে জোড়াল হচ্ছে প্রক্লেমেশান অব রিপাবলিক' ঘোষণার দাবি। তিনি বলেছেন, “আমাদের চব্বিশের যে বিপ্লবটা হয়েছে এ বিপ্লবের স্বীকৃতিটা আমরা চাইছি। প্রক্লেমেশন অব রিপাবলিক চাইছি আইন। যেটার মাধ্যমে সংবিধানকে বাতিল করে পুরো আইনকে প্রক্লেমেশনের আন্ডারে নিয়ে আসা হবে”।
নতুন সংবিধান রচনা এবং গণঅভ্যুত্থানকে নথিভুক্ত করার এই দাবির পর প্রশ্ন তুলছে রাজনৈতিক মহল। তাঁদের একটাই দাবি, আগে শান্তি ফেরাতে হবে। না-হলে, এই দেশ ভেঙে পড়বে। এটা ঠিক যে অর্থনৈতিক ভাবে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। এই অবস্থায় দেশের নতুন সংবিধান লেখার প্রস্তাবে কতটা সম্মতি দেবে উপদেষ্টা সরকার, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে।
কারণ, ইউনিস সরকারও জানে, নতুন করে সংবিধান লিখতে হলে আগে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এরপর সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং আইন বিশেষজ্ঞদের থেকে পরামর্শ নিয়ে তৈরি করতে হবে নতুন সংবিধান। কিন্তু ঢাকার মসনদে ইউনিস সরকারের মেয়াদ কতদিন, এই পাঁচ দফার দাবির সেই প্রশ্ন এবার উঠতে শুরু করল বাংলাদেশের রাজনীতিতে।