হিমালয় চিরকালই রহস্যময়। হিমালয়ের শৃঙ্গ, গিরিখাত, কত অজানা ঘটনার সাক্ষী। যা সভ্য জগতের কাছে পৌঁছয় না। কখনও তুষারঝড়, কখনও ধস, বিপদ যেন ওত পেতে থাকে আঁকেবাঁকে। তিব্বত, চিন থেকে ভারতের বিরাট অংশ জুড়ে এই হিমালয়ের বিস্তার। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানেও ছড়িয়ে আছে হিমালয়ের বেশ কিছু অংশ। এর মধ্যে সব থেকে উঁচু এভারেস্ট। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ৮৮৫০ মিটার বা ২৯ হাজার ফুট। বছরের পর বছর ধরে অনেক পর্বতারোহী এভারেস্ট জয় করার জন্য চেষ্টা করেছেন। ১৯৫৩ সালে প্রথম এভারেস্ট জয় করেন তেনজিং নোরোগে ও এন্ডমন্ড হিলারি। ইতিহাস তাই বলছে। সম্প্রতি এভারেস্টের পথে গিয়েছিল ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের টিম। তুষারাবৃত হিমালয়ে একটি বুট খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। যে বুটের মধ্যে ছিল কারও পায়ের অংশও। কিন্তু ওই পা কার! তা নিয়ে বাড়ছে রহস্য। যে সব তত্ত্ব ও তথ্য উঠে আসছে, তাতে পাল্টে যেতে পারে পর্বতারোহনের ইতিহাস।
এভারেস্টের উত্তর দিকের নিচের অংশ রোংবুক হিমবাহ। সেই হিমবাহে অভিযান চালায় ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের তথ্যচিত্র নির্মাতাদের দল। সেই দলে ছিলেন পরিচালক জিমি চিন, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও পর্বতারোহী এরিখ রোপেকে ও মার্ক ফিশার। কাজ চলাকালীন হঠাৎ বরফের মাঝে আটকে থাকা একটি বুটে হোঁচট খান তাঁরা। জুতোটি দেখার পর ভাল করে পরীক্ষা করা হয়। দীর্ঘদিন বরফের নিচে আটকে ছিল সেই বুট। বরফ খুঁড়ে তা বের করে আনেন তাঁরা। বুটের ভিতরে পাওয়া যায় এক পর্বতারোহীর পায়ের অংশ। এতদিন তুষারে আবৃত থাকায় সেই দেহাংশতেও পচন ধরেনি। ওই বুট থেকে একটি মোজাও খুঁজে পান তাঁরা। তাতে লাল সুতো দিয়ে সেলাই করা ছিল অ্য়ান্ড্রু কমিন আরভিনের নাম। ১০০ বছর আগে এভারেস্টে গিয়ে হারিয়ে যান আরভিন। ওই মোজা দেখেই ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের ওই দলের সদস্যরা বুঝতে পারেন, এটি আরভিনেরই। একটি বিশেষ এপিসোডে আরভিনের ওই তথ্যটির বর্ণনা করা হয়েছে।
এভারেস্ট অভিযান নিয়ে অনেক গাঁথা প্রচলিত আছে। এভারেস্ট অভিযান চলাকালীন এমন অনেক ঘটনার ঘটে, যা বিষ্ময়কর। বিপদসঙ্কুল অভিযানে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনা হামেশাই ঘটে। ব্রিটিশ পর্বতারোহী আরভিনকে নিয়েও এর আগে বেশ কিছু তত্ত্ব ছিল। জানা যায়, ১৯৭৫ সালে এক চিনা পর্বতারোহী এভারেস্টের নর্থইস্ট রিজের নিচে অভিযান করেন। পুরনো দিনে পর্বতারোহীরা যেমন পোশাক পরতেন, তেমনই এক পোশাক বরফের নিচে খুঁজে পান তিনি। কিন্তু চিন গোটা বিশ্বকে সে কথা জানতে দেয়নি বলে অভিযোগ। জানা যায়, আরভিনের কাছে একটি কোডাকের ক্যামেরা ছিল। এত বছর পর ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক টিম বরফ থেকে আরভিনের বুট খুঁজে পেলেও ক্যামেরা খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেই ক্যামেরা পেলে অনেক প্রমাণই উঠে আসবে। খুঁজে পাওয়া বুট ও দেহাংশটি চিন-তিব্বত মাউন্টেরিং অ্যাসোসিয়েশনের কাছে জমা দেওয়া হয়। আরভিনের পরিবারের কাছে ডিএনএ নমুনা পাঠানোর জন্য গ্রেট ব্রিটেনের বিদেশমন্ত্রকের সঙ্গেও কথাবার্তা চলছে।
১৯২৪ সালে এভারেস্ট অভিযান করেন বিখ্যাত পর্বতারোহী জর্জ ম্যালরি। সেই অভিযানে তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরভিন। আরভিনের সেই সময় বয়স ছিল মাত্র ২২ বছর। অভিযানে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান তাঁরা। ১৯৯৯ সালে খোঁজ পাওয়া যায় ম্যালরির দেহাবশেষ। কিন্তু আরভিনের এতদিন কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। এই রহস্যের সমাধান হলে পর্বতারোহনের অনেক ইতিহাসই পাল্টে যাবে। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরই অনেকে মনে করছেন, এডমন্ড হিলারি ও তেনজিং নোরগের ২৯ বছর আগেই আরভিন ও ম্যালরি এভারেস্টের শিখরে পৌঁছেছিলেন।