প্রথমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তারপর ব্রাজিল। এখন ভেনেজুয়েলা। নির্বাচনী পরাজয় যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না দক্ষিণপন্থীরা। জনতার রায় বিপক্ষে যেতেই তাঁরা চেষ্টা করছেন পথে নেমে হিংসাত্মক পদ্ধতিতে আন্দোলন করতে।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিকতম অশান্তির ঘটনা ঘটেছে ভেনেজুয়েলায়৷ হুগো শাভেজের দেশে গত রবিবার ছিল প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। লাতিন আমেরিকায় বামপন্থীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দুর্গ ভেনেজুয়েলা। সোমবার ফলপ্রকাশের পরে দেখা যায়, কঠিন লড়াই সত্ত্বেও অটুট রয়েছে ভেনেজুয়েলার বাম ঘাঁটি। ৫১.২ শতাংশ ভোট পেয়ে আগামী ৬ বছরের জন্য তৃতীয়বারের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন শাভেজের উত্তরসূরী নিকোলা মাদুরো। কিন্তু সেই ফল মেনে নিতে নারাজ দক্ষিণপন্থীরা৷ রীতিমতো রাজপথে নেমে প্রবল বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তাঁরা। অভিযোগ করছেন নির্বাচনে বিপুল কারচুপি করেছেন মাদুরো। ইতিমধ্যেই দক্ষিণপন্থী বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে প্রবল সংঘর্ষ হয়েছে আইনশৃঙ্খলারক্ষী বাহিনীর। অন্তত ১১ জন বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর খবর এসেছে। ভ্যালেন্সিয়া, মারাকাইবো, মারাকে, বারকুইসিমেটোর মতো শহরে তুমুল বিক্ষোভ চলছে। হুগো শাভেজের অন্তত দুটি মূর্তি ভেঙে ফেলেছেন দক্ষিণপন্থীরা৷ মাদুরোর নেতৃত্বাধীন বামপন্থী শাসকদলের দাবি, বিরোধীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমি শক্তির মদতপুষ্ট।
দক্ষিণপন্থীদের দাবি, মাদুরো আসলে ভোটে হেরেছেন৷ কারচুপি করে তাঁকে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। আসলে নাকি মাদুরো বিরোধী ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী এডমুন্ডো গঞ্জালেস উরুশিয়া ৭৩.২ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলনেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদোও দাবি করেছেন, মাদুরোর থেকে দ্বিগুণেরও বেশি ভোট পেয়েছেন তাঁদের প্রার্থী। তাঁরা এই ফলাফল মানছেন না।
ভেনেজুয়েলার অশান্তির আঁচ এসে পড়েছে বিশ্ব রাজনীতির অঙ্গনেও। লাতিন আমেরিকার একাধিক দেশ, বিশেষত যে দেশগুলির শাসনক্ষমতা দক্ষিণপন্থীদের হাতে, তারা এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আর্জেন্টিনার অতিদক্ষিণপন্থী প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মিলেই, যিনি মাত্র কয়েকমাস আগেই ক্ষমতায় এসেছেন। বলাই বাহুল্য আমেরিকা এবং ব্রিটেনের মতো দেশগুলি ভেনেজুয়েলার নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাঁদের সঙ্গে গলা মিলিয়েছেন এলন মাস্কের মতো কট্টর বামবিরোধী ধনকুবের। এক্স হ্যান্ডেলে মাদুরোকে 'স্বৈরশাসক' বলে আক্রমণ করেছেন তিনি। এলন মাস্ক আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট মিলেইয়ের পোস্ট শেয়ার করেছেন, যেখানে ওই অতিদক্ষিণপন্থী আর্জেন্টাইন নেতা লিখেছেন, 'Dictator Maduro, get the hell out!' পাল্টা এলন মাস্ককে তীব্র আক্রমণ করেছেন মাদুরো। তিনি লিখেছেন, মাস্ক হলেন ভেনেজুয়েলার গণতন্ত্রের শত্রু। মাদুরোর অভিযোগ, মাস্ক একটি ফ্যাসিস্ট মতাদর্শের প্রতিনিধি। তিনি সমাজ ও প্রকৃতির বিরুদ্ধে (anti-natural, anti-society)। প্রত্যাশিতভাবেই নির্বাচনী সাফল্যের জন্য মাদুরোকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে রাশিয়া এবং চিন।
ভেনেজুয়েলা কি ব্যতিক্রম? একেবারেই নয়। নির্বাচনে হারের পর রাজপথে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ উঠেছিল ব্রাজিলের অতিদক্ষিণপন্থী প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসেনারোর অনুগামীদের বিরুদ্ধেও। বোলসোনারোর বিরুদ্ধে বামপন্থীদের প্রার্থী ছিলেন লুইজ ইনাসিও লুলা ডা সিলভা, যিনি লুলা নামেই জনপ্রিয়৷ প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর সামান্য ব্যবধানে জয়ী হন লুলা। তারপরেই বোলসোনারোর হাজার হাজার সমর্থক ব্রাজিলের কংগ্রেস, পার্লামেন্ট এবং প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে হামলা চালান। তাঁরাও নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করেছিলেন। ঠিক একই দৃশ্যের পুনরাভিনয় হতে দেখা যাচ্ছে ভেনেজুয়েলায়।