১৯৪৫ সালের ৬ অগস্ট। মানবসভ্যতার ইতিহাসের অন্যতম কালো দিন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন জাপানের হিরোশিমা শহরে পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় আমেরিকা। সরকারি মতে, ওই পরমাণু বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় অন্তত ১ লক্ষ ৩৫ হাজার বাসিন্দার। আহত হয়েছিলেন ৩৫,০০০ মানুষ। ওই বিস্ফোরণের পর বিশাল শহর হিরোশিমা প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। বিস্ফোরণের তীব্রতা ও ভয়াবহতা এতই বেশি যে, আজও, ঘটনার ৭৭ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও ওই অঞ্চলের বাতাসে মিশে রয়েছে ইউরেনিয়ামের পারমাণবিক কণা। যার ফলে, কোনও নবজাতকও এই বিষবাষ্পের আওতায় থেকে মুক্ত নয়।
কিন্তু, যাঁরা ওই বিস্ফোরণটি ঘটিয়েছিলেন, তাঁরা কেমন আছেন এতদিন পর?
ঘটনার বহু যুগ পেরিয়ে যাওয়ার পরে আর কেউই বেঁচে নেই। তবে, যাঁরা সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন ওই 'কর্মকাণ্ডে', জীবিতকালের বাকি সময়টা তাঁদের কাটাতে হয়েছে ঘোর অন্ধকারের মধ্যেই।
তৎকালীন মার্কিন বায়ুসেনার মেজর ক্লাউড এদার্লি সেরকমই একজন। ১৯১৮ সালে জন্মানো এদার্লি ছিলেন বি-২৯ বোমারু বিমানের চালক। যাঁর কাজ ছিল, হিরোশিমায় বিস্ফোরণের ঠিক আগে 'টার্গেট'কে স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করে দেওয়া।
রিপোর্টে বলা হয়েছিল, ওই মারণ বিস্ফোরণ-যজ্ঞে অংশ নেওয়া ৯০ জন সেনার মধ্যে এদার্লিই ছিলেন একমাত্র, যিনি তাঁর কাজের জন্য পরে বারবার অনুতাপ করেছেন। মিশে গিয়েছেন লজ্জায়। পরে তিনি সক্রিয়ভাবে 'অ্যান্টিনিউক্লিয়ার অ্য়াকটিভিস্ট' হিসেবে কাজ শুরু করেন। তাঁর মৃত্যু হয় ১৯৭৮ সালে।
'লিটল বয়'-এর বিস্ফোরণের পরেই ঘন মাশরুমের মত ধোঁয়া উঠে এসেছিল মাটি থেকে ৭০ হাজার ফুট উপরে। সেই ধোঁয়ায় শাসকের অহঙ্কার মিশে থাকলেও, মানুষের লজ্জা যে ঢাকা পড়েনি, তার প্রমাণ মেজর ক্লাউড এদার্লি নিজেই।