বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ ছিল, অথচ ক্রমশ কমছে দেশের জন্মহার। দীর্ঘদিন ধরেই চিন সরকার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে আসছিল। বর্তমানে এই নিয়ন্ত্রণই বুমেরাং হয়ে ফিরেছে ওই দেশে। ক্রমাগত কমছে জন্মহার, এর জেরে বেজায় চিন্তায় চিন সরকার। গোটা দেশ জুড়ে বন্ধ হতে বসেছে কয়েক হাজার কিন্ডার গার্ডেন। ২০২৩ সালে ওই দেশের প্রায় ১৫ হাজার কিন্ডার গার্ডেনের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই ২০২২ সাল থেকে ক্রমবর্ধমান হারে কমছে চিনের শিশুদের সংখ্যা। এমতাবস্থায় গত দুবছর ধরে ওই দেশের কিন্ডার গার্ডেনগুলিতে ভর্তিই হচ্ছে না কেউ।
২০২৩ চিনে শিশুর সংখ্যা তার আগের বছরের তুলনায় ৫৩.৫ লাখ কমে গিয়েছে। মোট শিশুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৯ লাখে। এর প্রভাব পড়ছে প্রাইমারি স্কুলগুলিতেও। এক বছরে ৫,৬৪৫টি প্রাইমারি স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এমতাবস্থায় দেশের জনসংখ্যা এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে রীতিমত অস্বস্তিতে চিনের কমিউনিস্ট সরকার। জন্মের হার কমে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করেছে দেশের অর্থনীতিও।
এমতাবস্থায়, দেশের দম্পতিদের সন্তানধারণে উৎসাহিত করতে সম্প্রতি নয়া নির্দেশিকা জারি করেছে চিন স্টেট কাউন্সিল। জনসংখ্যার সংকট দূর করতে, সন্তান জন্মদানের ভর্তুকি এবং দম্পতির জন্য করে ছাড় দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। জন্মবান্ধব সামাজিক পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে ১৩টি পদক্ষেপের পরিকল্পনা করে ফেলছে ওই দেশের সরকার। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, চাইল্ড কেয়ার সিস্টেম প্রসারিত; শিক্ষা, আবাসন এবং কর্মসংস্থানের উপর আরও জোর দেওয়া।
এর আগেও, জন্মহার স্বাভাবিক করতে চেষ্টা চালিয়েছিল চিন প্রশাসন। সাধারণভাবে কমিউনিস্ট শাসিত চিনে বিয়ের জন্য ন্যূনতম ৩ দিনের সবেতন ছুটি পাওয়া যেত। কিন্তু ২০২২ সালে জন্মহার কমে যাওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েছিল চিন সরকার। সুরাহায়, উত্তর-পশ্চিম চিনে গাংসু প্রদেশ এবং কয়লা-উৎপাদক সাংশি প্রদেশে ৩০ দিনের বৈবাহিক ছুটি দিয়েছিল সরকার। সাংহাই দিয়েছিল ১০ দিনের ছুটি ৷
২০২২ সালে ছয় দশকের মধ্যে প্রথমবারের শিশু জন্মহার কমে যায়। চিন সরকারের আশঙ্কা, এই ঘটনা দীর্ঘমেয়াদে জনসংখ্যা হ্রাসের সূচক হতে পারে। তাই, এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হল নতুন বাবা-মায়েরা যাতে কাজের ছুটি নিয়ে আরও নিরাপদ বোধ করেন তা নিশ্চিত করা, কারণ স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে মাতৃত্ব, পিতৃত্ব এবং শিশু যত্নের ছুটি সংক্রান্ত নীতিগুলি কার্যকর করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে সরকারের তরফে।
শিশুদের সংখ্যা কমে আসায়, জন্মহার কমে যাওয়ায় ওই দেশে বাড়ছে প্রবীণ নাগরিকদের সংখ্যা। ২০২৩ সালের শেষে ৬০ বা তার বেশি বয়সী প্রায় ৩০ কোটি মানুষ ছিলেন চিনে। এভাবে চলতে থাকলে, ২০৩৫ সালেই সেই সংখ্যা ৪০ কোটি এবং ২০৫০ সালে ৫০ কোটিতে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। অধিকাংশ কিন্ডার গার্ডেন পরিণত হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে।
‘এক সন্তান নীতি’র স্রষ্টা এই দেশ, এই মুহূর্তে ভুগছে ‘সন্তানহীনতায়’। যদিও দেশের পরিস্থিতির জন্য দায়ী করা হচ্ছে এই এক সন্তাননীতিকেই। এর আগে, জনসংখ্যার কথা উঠলেই চিনের পর পরই উচ্চারিত হতে ভারতের নাম। কিন্তু গত কয়েক বছরে চিনকে জনসংখ্যার নিরিখে পিছনে ফেলে দিয়েছে ভারত।