এমন একটা সময়, যখন বিশ্বের প্রায় কোনও প্রান্তের মানুষই ফোন ছাড়া একটা দিনও কাটানোর কথা ভাবতেই পারেন না। আজ থেকে ১৫-২০ বছর আগেও যে কথা ভাবলে মনে হত, সাই-ফাই সিনেমার কাহিনি, প্রযুক্তির কল্যাণে আজ সেটাই ঘোর বাস্তব। রক্তমাংসের মানুষের জীবনের প্রায় গোটা অস্তিত্বটাই ধরা থাকছে হাতের মুঠোফোনে। ওটা না থাকলে মানুষ অসহায় ও বিপন্ন। এই চেনা বিশ্বাসেই একটা আঘাত ইয়াং হাও নামের এক পিএচডি পড়ুয়ার একটি পদক্ষেপ।
কী সেই পদক্ষেপ?
জানা গিয়েছে, চিনের এই পিএইচডি পড়ুয়ার ১৩৪ দিন ধরে (প্রায় সাড়ে চার মাস) গোটা দেশ ঘুরে বেরিয়েছেন। মোবাইল ফোন এবং কম্পিউটার ছাড়া! দেশের ২৪টা প্রভিন্সে তিনি প্রাণখুলে ঘুরে বেড়ালেন দুটো ইন্টারনেট ফ্রি-ক্যামেরা নিয়ে। অর্থাৎ, তিনি ঘুরলেন এবং চারপাশ ভাল করে দেখলেন। 'চারপাশকে দেখা', যা মানুষের অস্তিত্বের একটা বড় ভিত্তি, তা মোবাইলের পর্দায় চোখ রাখার অভ্যাসে ক্রমে লুপ্তপ্রায়। ইয়াং হাওয়ের এই এক্সপেরিমেন্ট সে কথাও যেন ফের একবার মনে করিয়ে দেয়।
'কী হবে যদি আমি মোবাইল আর ইন্টারনেট ছাড়া থাকি? আমাদের শরীরের ডিজিটাল অঙ্গ হয়ে উঠেছে এই দুটো জিনিস. এরা কতটা গুরুত্বপূর্ণ? এদের ছাড়া কি কয়েকমাস নিজের মতো করে বাইরের জীবনে বাঁচা একেবারেই সম্ভব না'? নিজেকেই একদিন প্রশ্ন করেছিলেন হাও। সেই প্রশ্নকেই তারপর অনুসরণ করতে শুরু করলেন একরকম।
তবে, সমস্যা কি একেবারে হয়নি? তা নয়। সমস্যা হয়েছে। বহুদিনের চেনা অভ্যাসে বাধা পড়লে যতটা হয়! হোটেল বা গাড়ি বুক করতে সমস্যা হয়েছে। হাতে পর্যাপ্ত নগদ অর্থ না থাকলে সমস্যা হয়েছে। কেউ কেউ তাঁর এই সিদ্ধান্তের কথা শুনে জানতে চেয়েছেন, হাও কোনও অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে লিপ্ত হয়েছেন কি না! কিন্তু, এই সমস্যাগুলোর থেকেই দৃষ্টিটা অল্প একটু সরিয়ে নিলে যে জীবনপ্রাচুর্যের কথা উঠে আসে, তা এতই বিপুল যে, শেষমেশ মনেই থাকে না, আদৌ ওই সমস্যাগুলি ছিল বলে!
প্রচুর বই পড়েছেন এই সময়টা হাও। শান্ত হয়ে একদৃষ্টিতে চেয়ে দেখেছেন সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত। দেখেছেন মানুষ কাজে যাচ্ছে, ঘরে ফিরছে। দেখেছেন, আসলে, কীভাবে অনেক লোকের মাঝে থেকেও নিজেকে খুঁজে নিয়ে নিজের মতো করে নিজের সঙ্গে জীবন কাটিয়ে দেওয়া যায়।