ঘুরে ফিরে সেই পেগাসাস (Pegasus)। এবারও সংসদের (Parliament) অধিবেশন শুরুর ঠিক ৪৮ ঘণ্টা আগে। তবে দেশের কোনও রাজনৈতিক দল নয়। ইজরায়েলের এই স্পাইওয়ার নিয়ে এবার বোমা ফাটাল মার্কিন দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমস (New york times)। দৈনিকের দাবি, ২০১৭ সালে ইজরায়েল (Israel) সফরে এনএসও (Nso)-র এই সফ্টওয়ার কিনেছিল মোদী সরকার (Nda goverment)। প্রসঙ্গত, গত বছর সংসদের বাদল অধিবেশনের ঠিক ৪৮ ঘণ্টা আগে পেগাসাস ইস্যুতে ঝড় ওঠে। যার রেশ চলে শীত অধিবেশনের শেষ দিন পর্যন্ত। তাদের ফোনে আড়িপাততে এই সফ্টওয়ার ব্যবহার করতে কেন্দ্র। বিরোধীদের এই অভিযোগের এখনও কোনও স্পষ্ট জবাব নেই কেন্দ্রের এনডিএ সরকারের কাছে। এমনকী, সুপ্রিম কোর্টেও এই ব্যাপারে জবাব এড়িয়েছে সরকার।
তার মধ্যেই মার্কিন দৈনিকের খবর, ২০১৭ সালের জুলাইয়ে মোদীর সফরের সময়ই ইজরায়েল থেকে প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা নজরদারি সরঞ্জাম কিনতে প্রায় ১৫,০০০ কোটি টাকার দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সই হয়েছিল। ইজরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি সেই ‘প্রতিরক্ষা চুক্তির’ তালিকায় অন্যতম ছিল ফোনে আড়ি পাতার স্পাইঅয়্যার পেগাসাস।
আরও পড়ুন : বাজেট অধিবেশনেও তৃণমূলকে পাশে চায় কংগ্রেস, ঘুরিয়ে বার্তা সনিয়ার
ইজারায়েলের এনএসও নামে সংস্থা প্রায় এক দশক ধরে আড়ি পাতার স্পাইঅয়্যার বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা এবং আইন প্রণয়ণকারী সংস্থাকে বিক্রি করে আসছে বলেও নিউ ইয়র্ক টাইমসের ওই প্রতিবেদনের দাবি। ওই স্পাইঅয়্যারের সাহায্যে অ্যান্ড্রয়েড বা আইফোনে কথোপকথনের উপর নজরদারি চালানো সম্ভব। মোদীর সেই সফরের কয়েক মাস পরেই ভারতে এসেছিলেন তৎকালীন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। ঘটনাচক্রে, এর কিছু দিন পরেই রাষ্ট্রসংঘের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিষদের ভোটে ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছিল মোদী সরকার। নয়াদিল্লির কয়েক দশকের পুরনো বিদেশনীতি থেকে সরে এসে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিষদে প্যালেস্টাইনকে ‘পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র’ করার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিল ভারত।
পেগাসাস-কাণ্ডে বিরোধীদের মূল প্রশ্ন ছিল, নরেন্দ্র মোদী সরকার কি ইজরায়েল থেকে ফোনে আড়ি পাতার পেগাসাস স্পাইঅয়্যার কিনেছে, না কি কেনেনি? গত বছর কেন্দ্রীয় সরকার পেগাসাস নিয়ে সংসদে বিবৃতি দিলেও এ প্রশ্নের উত্তর দেয়নি। সুপ্রিম কোর্টে এ সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে ‘জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাত’ দিয়েছিলেন কেন্দ্রের কৌঁসুলী, সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তাঁর মন্তব্য ছিল, ‘‘আমরা সন্ত্রাসবাদীদের জানতে দিতে পারি না, কোন সফ্টঅয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জনসমক্ষে কোনও বিবৃতি দেওয়া যাবে না।’’
প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানার বেঞ্চ সরাসরি কেন্দ্রের যুক্তি খারিজ করে দিয়েছিল। প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, ‘‘আমাদের নাগরিকরা বলছেন, তাঁদের ফোনে আড়ি পাতা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় নিরাপত্তার যুক্তি খাড়া করা যাবে না। নাগরিকদের গোপনীয়তার অধিকার সুরক্ষিত থাকা উচিত।’’ ইজরায়েলি স্পাইঅয়্যার কেনা এবং তার সাহায্যে বিরোধী নেতাদের উপর নজরদারির অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আরভি রবীন্দ্রনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গড়ে দেওয়া হয়। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণে সেই তদন্ত চলছে।