আগেই প্রকাশ্যে এসেছিল হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যু। শুধুমাত্র মৃতদেহ দেখেই যে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছিল এমনটা নয়, ইজরায়েলের তরফে জানানো হয়েছে DNA টেস্ট করার পরই ইয়াহিয়ার মৃত্যুর কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু কীভাবে মৃত্যু হল ইয়াহিয়া সিনওয়ারের? সেই সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য এল প্রকাশ্যে-
প্রায় ১ বছরের বেশি সময় ধরে সিনওয়ারকে খুঁজছিল ইজরায়েল। অভিযোগ উঠেছে, তাঁর চক্রান্তেই ইজরায়েলের উপর হামলা চালানো হয়। আর হামলার পর থেকেই খোঁজ মিলছিল না সিনওয়ারের। অবশেষে তাঁর মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আনল ইজরায়েল ডিফেন্স ফোর্স।
ইজরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে, ৬১ বছর বয়সী ইয়াহিয়া সিনওয়ারের থাকার জন্য একটি সুরঙ্গ তৈরি করা হয়েছিল। গাজা উপত্যকার নিচে থাকা ওই সুরঙ্গতেই বেশিরভাগ সময় থাকতেন তিনি। এছাড়াও মানব ঢাল তৈরি করা হয়েছিল। ইজরায়েল থেকে আটক করা বেশ কিছু সাধারণ মানুষকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হত বলে অভিযোগ। এর সঙ্গে একাধিক দেহরক্ষী রাখতেন তিনি। যাঁরা যে কোনও পরিস্থিতিতে শত্রুর মোকাবিলা করতে সমর্থ ছিলেন।
IDF-এর তরফে জানানো হয়েছে, ৮২৮ নম্বর বিসলামাক ব্রিগেডের একটি ইউনিট বুধবার রাফাহ অঞ্চলে টহল দিচ্ছিল। সেই সময় তিনজন সশস্ত্র ব্যক্তির মুখোমুখি হয়েছিল। তারপরই উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। IDF-এর দাবি সেই সময়ই মৃত্যু হয়েছিল ইয়াহিয়ার। যদিও সেই সময় ঝুঁকি বিবেচনা করে দেহটি সেখানেই রেখে দেওয়া হয়েছিল। পরিবর্তে DNA টেস্ট করা হয়। সেই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই মৃত্যু যে নিশ্চিত সেই বিষয়ে ঘোষণা করা হয়।
এই বিষয়ে IDF-এর মুখপাত্র একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তাঁদের বাহিনী যে ওই সুরঙ্গের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে তা সিনওয়ারের দেহরক্ষীরা বুঝতে পারেনি। সেই সময় একজনকে দৌড়াতে দেখেন IDF-এর সেনাবাহিনী। এবং একটি ভবনের ভিতরে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। তারপর, ড্রোনের মাধ্যমে চিহ্নিত করে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে নিশ্চিত করা হয় মৃত ওই ব্যক্তিই ইয়াসিনা সিনওয়ার।
কীভাবে ইয়াহিয়া সিনওয়ারের দেহ উদ্ধার করা হয়?
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মাথাটি পুরোপুরি ক্ষত বিক্ষত হয়ে গিয়েছিল। মাথার সামনের অংশটি পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। ব্যাপক রক্তক্ষরণ হয়েছিল। তাঁর শরীরের অটোপসি করেছিলেন চিকিৎসক চেং কুগেল। নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া একটি সাক্ষাতকারে তিনি জানিয়েছেন, ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মাথায় সম্ভবত কোনও ছোটো মিসাইল আঘাত করেছিল। কারণ মাথার সামনের দিকটি পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। হাতগুলি ভাঙা ছিল।
IDF-এর তরফে জানানো হয়েছে, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ওই হামলা চালানো হয়নি। তবে, তাদের কাছে ইয়াহিয়া কোথায় কোথায় থাকতে পারেন সেই সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য ছিল গোয়েন্দাদের কাছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে সেনা-বাহিনী কাজ করছিল। এবং হঠাৎ করে ইয়াহিয়ার খোঁজ মেলে। প্রায় এক বছর ধরে তিনি বিভিন্ন জায়গায় গা ঢাকা দিয়েছিলেন। যদিও এর আগে একাধিক শহরে তাঁর খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছিল। কিন্তু সন্ধান মেলেনি।
বৃহস্পতিবার ইজরায়েলের তরফে প্রথমে জানানো হয়, ওই দিন বিকালে গাজায় সম্ভবত নিহত হয়েছেন ইয়াহিয়া সিনওয়ার। কিন্তু মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়নি। জানানো হয়, কয়েকটি শারীরিক পরীক্ষার পর সেই বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। এরপর পরীক্ষা করা হয় এবং বৃহস্পতিবার সন্ধে নাগাদই ইজরায়েল ডিফেন্স ফোর্সের তরফে নির্দিষ্ট করে জানানো হয় তাদের হামলায় মৃত্যু হয়েছে ইয়াহিয়া সিনওয়ারের। যদিও গাজার যুদ্ধ এখনও চলবে বলে জানানো হয়েছে।