আর্থিক বিপর্যয়ের জেরে শ্রীলঙ্কায় (Sri Lanka Crisis) এবার রাজনৈতিক সংকট। মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টে ৪১ জন সদস্য সমর্থন প্রত্যাহার করায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের (Mahinda Rajapaksa) সরকার। এবার শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের কাছে বিরোধীদের একাংশ জানিয়েছে, অবিলম্বে পার্লামেন্টের অধিবেশনে সরকারকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হবে।
প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার (Gotabaya Rajapaksa) ইস্তফা ও আর্থিক সংকটের মোকাবিলায় জাতীয় সরকার গড়ার দাবি উঠছে শ্রীলঙ্কায়। বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাও রাজপক্ষে পরিবারকে ক্ষমতা থেকে সরানোর দাবি তুলে আন্দোলন করছে। রবিবার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়াকে একসঙ্গে শ্রীলঙ্কার ২৬ জন মন্ত্রী ইস্তফাপত্র জমা দেন। সোমবার অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে বাসিলকে অপসারিত করেন গোতাবায়া। দায়িত্ব দেওয়া হয় আলি সাব্রেকে। কিন্তু মঙ্গলবার ইস্তফা দিয়েছেন সাব্রে। তিনি জানান, বর্তমান সরকারের পক্ষে দেশকে আর্থিক সংকট থেকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব নয়। ইস্তফা দিয়েছেন পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার রজিথ সিয়ামবালাপিতিয়াও।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে দেশের শাসকদল ‘শ্রীলঙ্কা পিপল্স ফ্রিডম অ্যালায়েন্স’-এর নেতা তথা মন্ত্রী উদয় গাম্মনপিলা মঙ্গলবার রাজাপক্ষে ভাইদের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। তাঁর মতে, মন্ত্রিসভার রদবদল করে আর্থিক বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হবে না। অস্থির আবহে আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডার IMF জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখা হচ্ছে।
গত কয়েক দিন ধরেই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। তাঁর পদত্যাগের দাবিতে দেশবাসীর একের পর এক বিক্ষোভ মিছিলের সাক্ষী শ্রীলঙ্কা। এই চূড়ান্ত বিক্ষোভের প্রধান কারণ প্রথমবার ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে শ্রীলঙ্কার সমস্ত দেশবাসী অর্থনৈতিক ভাবে ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত। তাই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার পদত্যাগের দাবি করছে শ্রীলঙ্কার নাগরিকরা।
আরও পড়ুন: ৯০ বার টিকা নিয়ে ভাইরাল জার্মানির এক ব্যক্তি, উদ্দেশ্য জাল সার্টিফিকেট বিক্রি !
শ্রীলঙ্কা বহুমুখী অর্থনৈতিক আক্রমণের শিকার। খাদ্য, জ্বালানি ও বৈদেশিক মুদ্রা সংকট এদেশে একসঙ্গে দেখা গিয়েছে। এর আগে, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব,বিদ্রোহ এমনকি কোনও কোনও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অভাবের সঙ্গেও যুঝেছে তারা। কিন্তু সেই সংকটগুলি একসঙ্গে এসে পড়েনি। এখন একাধিক সংকটের আক্রমণ সামলাতে নাভিশ্বাস উঠছে দেশবাসীর। জ্বালানির সঙ্গে সঙ্গে অভাব দেখা দিয়েছে রান্নার গ্যাসেরও। অতিমারিতে চাকরি হারানো মানুষদের মধ্যে বেশির ভাগ এখনও কর্মহীন। সরকারি সংস্থার ক্যান্টিনগুলো এখনও চালু হয়নি।
এদিকে, অন্য দেশ থেকে অত্যাবশ্যক পণ্য নিয়ে আসা জাহাজগুলিও আটকে রয়েছে কলম্বো বন্দরে। এর কারণ, সেই সামগ্রীর দাম দেওয়ার মতো ডলার শ্রীলঙ্কার কাছে আর অবশিষ্ট নেই। অভিযোগ উঠেছে, দেশের এই দুরবস্থাতেও দেশের সম্মান রক্ষার জন্য যেটুকু বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় রয়েছে, প্রশাসন তা দিয়ে বৈদেশিক বাণিজ্যের পাওনা মেটাতে ব্যস্ত।