প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে! এ কথা কে না জানে! প্রেমের ঠিক আর ভুল বিচার করতেই সময় যায় জীবন যায়। তবু, ঠিক-ভুল মিশিয়েই প্রেমের পড়ে হেঁটে যেতে যেতে কতগুলো বিসন্ত যে কেটে যায় আদতে, তার খেয়ালই বা রাখে কতজন! খেয়াল রাখেননি চিনের শানডং প্রদেশের বাসিন্দা জু গুয়াংলি। প্রেমের জন্য একজন মানুষ কত দূর যেতে পারেন? উত্তর দিয়েছেন তিনি! বা, বলা ভাল, উত্তর দিয়েছে, তাঁর কাজ! শুধুমাত্র প্রিয় মানুষটির সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করা সম্ভব? তিনি পড়াশোনা করতেন অস্ট্রেলিয়ায়। মেলবোর্নের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা বিভাগের ছাত্র গুয়াংলি। তাঁর প্রেমিকা থাকেন চিনে। প্রেমিকার সঙ্গে সময় কাটাবেন বলে প্রতি সপ্তাহেই অস্ট্রেলিয়া থেকে চিন চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন তিনি। এবং, শুধু পরিকল্পনাই নয়! তা কাজেও করে দেখান!
প্রেমপর্ব সেরে আবার ফিরে যেতেন ক্লাস করতে। এক দিন ক্লাস করে ফের ফিরে যেতেন চিনে। অর্থাৎ, সাতদিনে একদিন ক্লাসের জন্য। বাকি দিন বরাদ্দ প্রেমের জন্য! প্রেমের জন্য অস্ট্রেলিয়া থেকে চিন এবং চিন থেকে অস্ট্রেলিয়া করতে প্রায় সাড়ে ন'হাজার মাইল পথ পেরোতে হত তাঁকে!
শুধু এক দিন অস্ট্রেলিয়া যাতায়াত, খাওয়া খরচ বাবদ ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় এক লক্ষ টাকা প্রতি সপ্তাহে খরচ করতেন গুয়াংলি। গত তিন মাস ধরে এই একই রুটিনে চলছিলেন তিনি।
এই সফরের সূত্রপাত হয়েছিল গত অগস্ট মাসে। তাঁর প্রেমিকাও আগে অস্ট্রেলিয়াতেই পড়াশোনা করতেন। তখন একসঙ্গে থাকার কোনও ঝক্কি ছিল না। কিন্তু মাসকয়েক আগেই পড়া শেষ করে চিনে ফিরে যান গুয়াংলি প্রেমিকা। তখনই চাগাড় দেয় বিরহ! বিরহের জন্য মানুষ যুগের পর যুগ ধরে এমন সব কাণ্ড ঘটায়, যা সচরাচর চট করে সাধারণ ভাবনায় আসেও না! সেই তালিকায় নতুন সংযোজন গুয়াংলির নাম! কয়েকদিন প্রেমিকার থেকে আলাদা থাকার পরই বিচ্ছেদের যন্ত্রণায় কাতর হয়ে ওঠেন তিনি। ঠিক করেন, যা-ই হয়ে যাক! প্রেমিকার কাছে চিনে ফিরে যাবেন। তবে, তাই বলে পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভাবেননি গুয়াংলি!
ঠিক করেন যে, সাপ্তাহিক ক্লাস সপ্তাহে এক বার করে অস্ট্রেলিয়া এসেই তিনি করবেন। সেই মতোই অস্ট্রেলিয়ায় ভাড়াবাড়ি ছেড়ে আবার চিনে চলে যান গুয়াংলি। শুধু এক দিন ক্লাস করতে অস্ট্রেলিয়া যেতেন। তার পর থেকে তিন মাস ধরে এমনটাই চলেছিল। যদিও এখন তাঁর রুটিনে বদল এসেছে। অক্টোবরের শেষের দিকে পরীক্ষা দিয়ে পাকাপাকি ভাবে চিনে ফিরে গিয়েছেন।
এটাই ছিল তাঁর শেষ সেমিস্টার। সেমিস্টার শেষ করার চাপও ছিল ঠিকই। তবে, বিরহের কাছে কোথায় লাগে সে সব! ডিগ্রি শেষ করতে সপ্তাহে একটি মাত্র ক্লাসের প্রয়োজন ছিল। সেটাই করেছেন। এবং, চালিয়ে গিয়েছেন প্রেম!
এ কথা তো সকলেই জানি যে, প্রেম একেবারে সামনে এসে দাঁড়ালে, চির-বিচ্ছেদের দিকে ঘূর্ণাবর্তের বেগে টেনে নিয়ে যাওয়ার ক্ষণটি উপস্থিত হলে, জীবনের আকাঙ্ক্ষা তীব্রতর হয়। প্রতি সপ্তাহে এক গোলার্ধ থেকে আরও এক গোলার্ধের দিকে গুয়াংলির এই যাত্রা এক সার্বভৌম প্রেম-চেতনার দিকে যাত্রাও বটে। প্রেম ছাড়া এত তীব্র ভাবে আর কবেই-বা বেঁচে থাকতে পারত মানুষ!