একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু। তার পিছনে অপরাধ মনে কত পরিকল্পনা চলে। একটি খুনের প্রমাণ লোপাট করতে কত কাঠ-খড় পোড়াতে হয়। এক একটি অপরাধ মেটানোর জন্য শীতল মস্তিষ্কে, ধাপে ধাপে কত কাজ করে যায় অপরাধী। হত্যাকারী কে! এই নিয়ে গোটা দুনিয়ায় লক্ষ লক্ষ সাহিত্য, সিনেমা হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে। রহস্যের সমাধান করতে কখনও এসেছেন শার্লক হোমস, কখনও ব্যোমকেশ, ফেলুদা, কিরীটির মতো কাল্পনিক চরিত্র। কিন্তু হত্যাকারী যদি হয় একটি গাছ! তা হলে সেই রহস্যের সমাধান কে করবে? প্রকৃতি যদি মানুষের সঙ্গে মনোস্তাত্বিক লড়াইয়ে নামে, তা হলে কী হবে! শুধু ক্রাইম থ্রিলার নয়, একটি গাছের নামের সঙ্গে জড়িয়ে অজস্র হাড়হিম করা কাহিনি।
বিশ্বের অন্যতম ভয়ঙ্কর গাছ
পৃথিবীতে উদ্ভিদ তো প্রাণীজগতের রক্ষক। জীবজগতের ভারসাম্য রক্ষা করে তারা। সেই রক্ষকই কিনা ভক্ষক! একটি গাছ, যা মানবসভ্যতার সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে। সত্যজিৎ রায়ের ছোটগল্প 'সেপ্টোপাসের খিদে' মনে আছে! গাছও যে মানুষকে 'খুন'করতে পারে, এমন ভাবনা তো কবেই ভাবা হয়েছিল। তেমনই একটি গাছ জিম্পি জিম্পি। অস্ট্রেলিয়ার জিম্পি শহরের নামেই এই গাছের নামকরণ হয়। কুইন্সল্যান্ডে ও গোটা বিশ্বে এই উদ্ভিদ সুইসাইড প্ল্যান্ট নামেই পরিচিত। সেপ্টোপাস না হলেও, এই গাছের 'খিদে' ভয়ঙ্কর। অস্ট্রেলিয়ার রেন ফরেস্টে দেখতে পাওয়া যায় এই গাছ। শোনা যায় এই গাছ ছুঁয়ে কেউ কেউ উন্মাদও হয়ে গিয়েছেন।
গাছে হাত দিলে কী হয়
এই গাছে হাত দিলেই কি মৃত্যু ঘনিয়ে আসে! না এতটাও সহজ নয় বিষয়টি। উদ্ভিদবিজ্ঞানী ম্যারিনা হারলে একবার এই গাছ ছুঁয়ে ফেলেছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, গরম অ্যাসিড ও কারেন্ট একসঙ্গে গায়ে লাগলে যেমন হয়, ঠিক তেমনই অনুভূতি হয়েছিল তাঁর।, গায়ে একসঙ্গে অনেকগুলি বিষাক্ত সূচ ফোটানো হলে যেমন হয়, ঠিক তেমনই হয় এই গাছ ছুঁলে। কম করে ২-৩ দিন ধরে গা, হাত ও পায়ে অসহ্য যন্ত্রণা হয়। এরপর মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে ওই ব্যক্তি। একা থাকার ইচ্ছে হয়। বন্ধুবান্ধব, পরিবার কাউকে ভাল লাগে না। কথায় কথায় রেগে যান। ভিড়ের মধ্যে গেলে বিরক্ত হয়ে যান। ধীরে ধীরে ওই ব্যক্তি আত্মহননের পথ বেছে নেন। এটা কি ঠান্ডা মাথায় খুন নয়! ওই গাছই যে মৃত্যুর কারণ, তা কেউ বুঝতেও পারে না। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই গাছ থেকে খুবই ক্ষতিকারণ নিউরোটক্সিন বেরোয়। তাই গাছ স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে মানবদেহে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। তাই মাকড়সা বা শামুকের বিষের মতো প্রতিক্রিয়া হয় শরীরে। ধীরে ধীরে মানসিক স্বাস্থ্যের উপরেও প্রভাব পড়ে। কীভাবে ওই 'বিষবৃক্ষ' মানবজাতির সর্বনাশ করে, তা নিয়ে এখনও গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা।
কী কী গাঁথা
করে এই গাছের সংষ্পর্শে এসে কী হয়, তা নিয়ে একাধিক হাড়হিম গল্প আছে। শোনা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এক সেনা ট্রেনিং চলাকালীন এই গাছ ছুঁয়ে ফেলেন। তিন মাস হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়েছিল তাঁকে। বিছানায় শুয়ে তিনি জানান, তাঁর মনে হয়েছিল, কোনও বিষাক্ত সাপ কামড়েছে তাঁকে। তিনি পাগল হয়ে যেতে বসেছিলেন। অবশেষে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন ওই ব্যক্তি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়েরই ঘটনা। এক সেনা না জেনে এই গাছের পাতা শৌচকর্মের জন্য ব্যবহার করেছিলেন। মাথায় গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি।
বিজ্ঞানীরা এই গাছ নিয়ে অনেক গবেষণা করেছেন। জানা গিয়েছে, সাধারণত অস্ট্রেলিয়ার অন্য পশুপাখি, কীটপতঙ্গ সাধারণত এই গাছকে এড়িয়েই চলে। একবার একটি কুকুর এই বিষবৃক্ষের কবলে পড়েছিল। ভয়ঙ্কর অবস্থা হয় অবলা প্রাণীটির। ৩ মিটার উুঁচু পান পাতার মতো দেখতে এই গাছের পাতা। তবে এই গাছের কাছে গেলে অসম্ভব দুর্গন্ধ থাকে। পাতার উপরে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম কাঁটা থাকে। তাই ইস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার রেন ফরেস্টে গেলে সাবধান। না হলে এই সুইসাইড প্ল্যান্ট জীবনে অভিশাপ ডেকে আনতে পারে।