দেশের মহিলাদের জন্য জারি কড়া পোশাকবিধি। মাথায় হিজাব পরা বাধ্যতামূলক। তাছাড়া পোশাক কেমন হবে, শরীর ঢাকা থাকবে কতটা, সব নিয়েই হাজারো নিয়ম বেঁধে দিয়েছেন ধর্মগুরুরা। সেই পোশাকবিধির বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ করতে অন্তর্বাস পরে রাস্তায় নেমেছিলেন ইরানের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মহিলা পড়ুয়া। মাথার হিজাব তো কোন ছাড়, সব নিয়ম কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের বাইরে কেবল অন্তর্বাস পরে হেঁটে চলে বেড়াতে দেখা যায় ওই তরুণীকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ইরানের পুলিশ গ্রেফতার করে ওই তরুণীকে। তারপর থেকেই কোনও খোঁজ নেই তরুণীর। তেহরানের ইসলামিক আজ়াদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ার নাম পরিচয় এখনও জানা যায়নি। তরুণীর গ্রেফতারির প্রতিবাদে জ্বলছে গোটা ইরান। পড়ুয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে সরব হয়ে রাস্তায় নেমেছেন ইরানের অসংখ্য সাধারণ মানুষ। পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখছে রাষ্ট্রপুঞ্জও।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইতিমধ্যে বিবৃতি দিয়ে তরুণীর মুক্তির দাবি জানিয়েছে। পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন তরুণীর উপর যাতে কোনও রকম অত্যাচার না হয়, তরুণী যাতে নিজের পরিবার এবং আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করতে পারেন তা-ও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। পুলিশি হেফাজতে তরুণীকে মারধর এবং তাঁর উপর যৌন হেনস্থার কিছু অভিযোগ উঠে এসেছে। সেই অভিযোগগুলিরও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
এক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে বাসিজ প্যারামিলিটারি ফোর্সের সদস্যেরা ওই তরুণীকে হেনস্থা করেছিলেন। তাঁর হিজাব ও পোশাক ছিঁড়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। সেই ঘটনার প্রতিবাদ হিসাবেই শুধু অন্তর্বাস পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে হাঁটতে শুরু করেন ওই নাম না জানা মহিলা পড়ুয়া।
শনিবার ভাইরাল হওয়া এক ভিডিয়োয় দেখা যায়,ইরানের রাজধানী তেহরানের ইসলামিক আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের বাইরে অন্তর্বাস পরে হাঁটছেন এক তরুণী পড়ুয়া। এর পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে একটি জায়গায় গিয়ে বসে পড়েন। তেহরানের রাস্তায় ‘নীরব প্রতিবাদ’ রাখছিলেন তরুণী। কিছু ক্ষণের মধ্যেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু তারপর থেকেই 'নিখোঁজ' সেই তরুণী, গ্রেফতারির পর কোথায় রাখা হয়েছে তরুণীকে, তিনি কী অবস্থায় রয়েছেন— কিছুই জানা যায়নি। স্বাভাবিক ভাবেই প্রতিবাদী তরুণী পড়ুয়ার জন্য উদ্বেগ বাড়ছে গোটা ইরানের। মনে পড়ে যাচ্ছে ইরানের মাহসা আমিনির কথা।
২০২২ -এর সেপ্টেম্বর মাস। হিজাব না পরে রাস্তায় বেরনোর 'অপরাধে' পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়েছিল ইরানি তরুণী মাহসা আমিনিকে। গ্রেফতার হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু হয় তাঁর। ওই ঘটনার পর বিশ্ব জুড়ে প্রতিবাদের আগুন জ্বলে উঠেছিল। পোশাক নিয়ে বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন ইরানি মহিলারা। হিজাব ফতোয়া উড়িয়ে, চুল কেটে প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন তাঁরা। হাত গুটিয়ে বসে থাকেনি ইরানি প্রশাসনও। ধর্মীয় ফতোয়া না মানায় মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল বহু বিক্ষোভকারীর। আগের থেকেও আরও বেশি কড়া করে দেওয়া হয় মহিলাদের জন্য হিজাব আইন। আইন ভঙ্গকারীদের শাস্তির মেয়াদ বাড়িয়ে ৫ থেকে ১০ বছর কারাদণ্ডের বিল পাশ করা হয় ইরানে। সঙ্গে সোর্বোচ্চ ৭ লক্ষ টাকা জরিমানা।