দুর্গা পুজো মানেই নস্ট্যালজিক বাঙালির স্মৃতি খুঁজে ফেরা। গোটা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাঙালির কাছে পুজোর এই পাঁচটা দিন যেন নতুন করে নিজেদের বছরের বাকি দিনগুলোর জন্য তৈরি করা। আর উৎসবের এই কটা দিনে কলকাতাকে চেনা দায়। সে ম্যাডক্সই হোক, আর কলেজ স্কোয়ার, পুজোয় বেড়িয়ে চেনা মুখ খুঁজে পাবেন না এমন বাঙালি পাওয়া ভার। কিন্তু যা নিয়ে এত আলোচনা, সেই দুর্গাপুজো আমাদের এই শহর কলকাতায় কার হাত ধরে শুরু হয় জানেন? উত্তরটা এখনও অনেকেরই অজানা। চলুন আজ সেই অজানার সন্ধানেই যাত্রা করি।
বারো ভুঁইয়ার সময় যখন বাংলার রাজনীতির আকাশে নানা পটপরিবর্তন হচ্ছে, লক্ষ্মীকান্তের উত্থান সেই সময়। ১৬০৮-এ লক্ষ্মীকান্তকে হালিশহর থেকে আটটি পরগনার নিষ্কর জমিদারি স্বত্ত প্রদান করেন মানসিংহ। সেই সঙ্গে পান রায়চৌধুরী উপাধি। এর আগে হালিশহরে বছর দু’য়েকের জন্য দুর্গাপুজো করলেও এ বার বড় আকারে বড়িশাতে পুজো শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন লক্ষ্মীকান্ত রায়চৌধুরী। দেবীকে মূলত চণ্ডীরূপে পুজো করা হত। এই প্রথম দেবীকে সপরিবার আবাহন করলেন লক্ষ্মীকান্ত। কার্তিকের চেহারায় কিছু পরিবর্তন আনা হল। পণ্ডিতরা বিধান দিলেন, দেবীর গায়ের রং হতে হবে স্বর্ণাভ বা শিউলি ফুলের বোঁটার মতো। ১৬১০ সালে শুরু। কাঠের থামের উপর হোগলাপাতার ছাউনি দেওয়া আটচালা মণ্ডপে দেবী আরাধনা শুরু হয়। পরে এর সঙ্গে যুক্ত হয় ষোলোটি থামবিশিষ্ট একটি নাটমন্দির। সেই সব সোনালী দিনের বিশেষ কিছুই আর অবশিষ্ট নেই এখন। কিন্তু আজও দেবী শরতের সোনা রং গায়ে মেখে সাবর্ণ পরিবারে আসেন। তাঁর গাত্রবর্ণ হয় শিউলি ফুলের বোঁটার মতো। লাল বেনারসী আর নানা অলঙ্কার অঙ্গে ধারণ করেন তিনি। গণেশের গায়ের রং হয় লাল। অসুরের সবুজ। দেবীর এক দিকে থাকেন রঘুপতি, অন্য দিকে শিব। সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের মোট আটটি বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়। প্রধান পুজোটি হয় বড়িশা আটচালায়। বাকি পুজোগুলি হয় আটচালা বাড়ি, বড় বাড়ি, মাঝের বাড়ি, বেনাকী বাড়ি, কালীকিঙ্কর ভবনে। এ ছাড়াও বিরাটিতে ও নিমতা পাঠানপুরের সাবর্ণবাড়িতে পুজো হয়। শাক্ত, শৈব এবং বৈষ্ণব— এই তিন মত মিলে যায় পুজোতে।