প্যান্ডোরা পেপার্সের গোপন তথ্য ফাঁসের ধাক্কায় ধরাশীয় একাধিক ধনকুবের। বিশ্বজুড়ে ৩৫ জন রাষ্ট্র নেতা, ৩০০ সরকারি কর্মকর্তা, সেনা ও শ খানেক ধনকুবেরের গোপন সম্পদ ও লেনদেন ফাঁস করে দিয়েছে ‘প্যান্ডোরা পেপার্স’।
প্যান্ডোরার বাক্সের মতোই এক এক করে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে বিশ্বের প্রভাবশালীদের গোপন সম্পদের খবর।
গত সাত বছর ধরে ফিনসেন ফাইলস, প্যারাডাইস পেপার্স, পানামা পেপার্স এবং লাক্সলিকসের প্রতিবেদনে অনেকের গোপন সম্পদের অনেক তথ্যই সামনে এনেছে। ২০১৬ সালে যখন পানামা পেপার্স ঝড় তুলেছিল, তখনই বলা হয়েছিল- ল’ ফার্ম মোস্যাক ফনসেকার যে তথ্য সামনে আনছে তা হিমশৈলের চূড়া মাত্র।
৯৫ হাজার অফশোর ফার্মের প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ নথি নিয়ে সাড়ে ছয়শর বেশি সাংবাদিকের পরিশ্রমে খুলেছে এই প্যান্ডোরার বাক্স।
নথিগুলো নিয়ে বিবিসি, গার্ডিয়ানসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের যৌথ অনুসন্ধান ‘বহু বাক্স খুলে দিচ্ছে’ বলে আইসিআইজে প্রতিবেদনের নাম দিয়েছে প্যান্ডোরা পেপার্স।
করস্বর্গ হিসেবে পরিচিত ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, বেলাইজ, পানামা, সাইপ্রাসের পাশাপাশি সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর ও সুইজারল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ১৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে এসব তথ্য এসেছে।
এসব নথিতে মোট ৩৫ জন রাষ্ট্র নেতার তথ্য মিলেছে। আছেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীরা। তাদের মধ্যে কেউ এখনও পদে বহাল, কেউবা সাবেক।
৩০০ কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন ৯০টির বেশি দেশের মন্ত্রী, বিচারক, মেয়র, মিলিটারি জেনারেল।
যে একশ বিলিয়নেয়ারের তথ্য এসেছে তাদের মধ্যে রয়েছে ব্যবসায়ী নেতা, রক তারকা, বিনোদন জগতের তারকা।
এদের অনেকে শেল কোম্পানির মাধ্যমে সম্পদ গড়েছেন, ইয়ট কিনেছেন, এমনকি পেইন্টিংও কিনেছেন।
গোপন নথি ফাঁসের সবচেয়ে বড় এই ঘটনা আবারও মেলে ধরেছে চোখের সামনে থাকা অর্থনীতির আড়ালের একটি চাঞ্চল্যকর চিত্র, যেখানে অফশোর অর্থনীতিতে বিশ্বের ধনকুবেররা কীভাবে তাদের সম্পদ লুকিয়ে রাখেন, কীভাবে কর না দিয়ে কিংবা নামমাত্র দিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েন।
দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও বৈশ্বিক কর ফাঁকি দেওয়ার ঘটনাগুলোর পাশাপাশি এবার সবচেয়ে বড় যে ঘটনাটি ফাঁস হয়েছে; তা হচ্ছে, যুক্তরাজ্যে গোপনে সম্পত্তি কিনতে ধনী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কীভাবে বৈধভাবেই নানা কোম্পানি গঠন করেছেন সেটি।
লন্ডনে একটি অফিস কেনার সময় সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও তার স্ত্রী শেরি ব্লেয়ারের ৩ লাখ ১২ হাজার পাউন্ডের কর ফাঁকি দেওয়ার তথ্য প্যান্ডোরার নথিতে এসেছে। তারা একটি অফশোর ফার্ম কিনেছিলেন, যার মালিকানায় ছিল ওই ভবনটি।
তালিকার আছেন জর্ডানের রাজা। তিনি গোপনে মালিবু এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন এবং লন্ডন ও দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডে আটটি সম্পত্তি কিনেছেন।
পানামা পেপার্সের নথি ছিল ১ কোটি ১৫ লাখ, সবই একটি কোম্পানির, তা ধারণে লেগেছিল মোট ২ দশমিক ৬ টেরাবাইট ডেটা; প্যারাডাইস পেপারে নথি বেশি হলেও ১ দশমিক ৪ টেরাবাইট ডেটাতে তা এঁটে গিয়েছিল।
আর প্যান্ডোরা পেপার্সের ১ কোটি ২০ লাখ নথি ধারণে লাগছে ২ দশমিক ৯ টেরাবাইট ডেটা। যার অর্থ গোপন নথি ফাঁসের এটাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ঘটনা। প্যান্ডোরা পেপার্সের তথ্য় সামনে এলে অনেক মহাকুবেরও ধরাশায়ী হবে বলে মনে করছেন বিশ্বের তাবড় আর্থিক বিশেষজ্ঞ