সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাস দখল করেছে বিদ্রোহীরা। তারপরই প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বাশার-আল-আসাদ সিরিয়া ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। এই পরিস্তিতিতে সিরিয়ার উপর হামলা চালাল আমেরিকা। একাধিক ISIS ঘাঁটি লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করেছে আমেরিকা। B-52 বোমার্স, f 15 ফাইটার জেট এবং A-10 ক্লোজ এয়ার সাপোর্ট এয়ারক্রাফ্ট দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের।
আমেরিকার তরফে এই বিষয় নিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে জানানো হয়েছে, দামাস্কাস এখন বিদ্রোহীদের দখলে। এই পরিস্থিতে যাতে ISIS কোনও অতিরিক্ত সুবিধা নিতে না পারে তার জন্যই হামলা চালানো হয়েছে। ৭৫টির-ও বেশি ISIS ঘাঁটি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
হোয়াইট হাউস থেকেই এই বিষয়ে যে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে জো বাইডেন জানিয়েছেন, সিরিয়ায় যেহেতু আপাতত কোনও প্রেসিডেন্ট নেই সেই কারণে ISIS আরও শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু আমেরিকা সেই অবস্থা কখনই হতে দেবে না।
এই বিষয়ে আমেরিকার সেন্ট্রাল কম্যান্ডো প্রধান জেনারেল এরিক কুরিল্লা জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতির জেরে ISIS কোনও সুবিধা পাক তা আমেরিকা চায়না। এবং নতুন করে তাদের সংঘবদ্ধ হয়ে ওঠার বিষয়টি কোনওভাবেই বরদাস্ত করবে না আমেরিকা। তিনি আরও জানিয়েছেন, সিরিয়ার কোনও সংগঠন যদি ISIS-কে সমর্থন করে তাহলে সেই বিষয়টিও আটকাবে আমেরিকা।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম BBC-র একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ এখন মস্কোতে রয়েছে। রাশিয়ার সরকারি গণমাধ্যমে এই খবর সম্প্রচারিত হয়েছে।
বাশার-আল-আসাদ দেশ ছাড়ার পর জনসাধারণের উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছিলেন বিদ্রোহী নেতা আবু মহম্মদ আল জোলানি। তাঁর বক্তব্য, দামাস্কাস দখলের ফলে সিরিয়ার নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষ বর্তমানে অনেক বেশি স্বাধীন বলেও দাবি তাঁর।
চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর সিরিয়ার সামরিক বাহিনী জানায়, বিদ্রোহীরা আলেপ্পার বড় অংশে ঢুকে পড়েছে। এবং তারপর থেকে যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধ একপ্রকার অবসান হয় ৫ ডিসেম্বর। এবং দামাস্কাসে ঢুকে পড়ে বিদ্রোহী গোষ্ঠী। ৬ ডিসেম্বর সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকা দখল করে নেয় তারা। পরের দিন অর্থাৎ ৭ ডিসেম্বর সিরিয়ার বৃহত্তম শহর হোমস দখল করে। এবং ৮ ডিসেম্বর সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাস দখল করে তারা।
উল্লেখ্য, গত ১৩ বছর ধরে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে। এর আগে ২০১১ সালে বাশাদ-আল-আসাদের বিরুদ্ধে একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠীকে সাহায্য করেছিল আমেরিকা। তারপরই সেখানে IS-এর আধিপত্য বিস্তার হয়েছিল। কিন্তু IS জঙ্গিদের বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে সেখানে অভিযান করে NATO বাহিনী। এর মাঝেই ইজরায়েলের বিমানহানাও হয়েছে সেখানে। এর ফলে আসাদ বাহিনী আরও দুর্বল হয়ে পড়ে।
দামাস্কাসে বসবাসকারী এক সাংবাদিক ড্যানি মাক্কি জানিয়েছেন, দামাস্কাস দখল করার পর উৎসবে মেতে ওঠে বিদ্রোহী গোষ্ঠী। সাধারণ নাগরিক থেকে শুরু করে সেনাবাহিনীর অনেকেই রাস্তায় নেমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই জানিয়েছেন, সিরিয়ায় আসল স্বাধীনতার অনুভূতি হচ্ছে।
যদিও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই জানিয়েছেন, এই সবকিছুর মধ্যেই নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও চিন্তিত সিরিয়ার সাধারণ মানুষ। ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ের জেরে অনেকের প্রাণহানি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্যদিকে সিরিয়ার সীমান্তবর্তী দেশগুলির মধ্যে রয়েছে লেবানন, জর্ডন ইত্যাদি। সেখানেও সিরিয়া থেকে প্রবেশ নিষিদ্ধ। ফলে এই পরিস্থিতিতে দেশও ছাড়তে পারছেন না অনেকেই।