তাঁর কণ্ঠে জাদু আছে । কখনও সেই কণ্ঠে প্রেমের জোয়ার, কখনও বিরহের সুর...। মন খারাপের দিন হোক বা প্রেম নিবেদন অথবা পার্টি মুড...সবেতেই জড়িয়ে রয়েছেন তিনি । জনপ্রিয় তারকা, তাঁর খ্যাতি আসমুদ্রহিমাচল পর্যন্ত । অথচ স্টারডম শব্দটা তাঁর ডিকশনারিতেই নেই । মাটির কাছাকাছি থাকতেই পছন্দ করেন । আজ সেই জিয়াগঞ্জের সেই ছেলেটার জন্মদিন । ঠিকই ধরেছেন । কথা হচ্ছে অরিজিৎ সিং-কে নিয়ে । ৩৭ বছর পূর্ণ করলেন অরিজিৎ সিং ।
খুব সময়ের ব্যবধানে একাধিক সিনেমায় একের পর এক হিট গান গেয়ে সকলের মন জয় করে নিয়েছেন অরিজিৎ । কিন্তু, এই জনপ্রিয়তা, খ্যাতির রাস্তায় পৌঁছতে তাঁকেও কম স্ট্রাগল করতে হয়নি । রিয়্যালিটি শো-এ অংশ নিয়েছেন অথচ সেরা হননি । মাঝ পথেই থেমে গিয়েছিল তাঁর যাত্রা । কিন্তু, তিনি থামেননি । তাই তো আজ তিনি দ্য অরিজিৎ সিং ।
১৯৮৭ সালের ২৫ এপ্রিল মুর্শিদাবাদে জন্মগ্রহণ করেন অরিজিৎ। বাবা পঞ্জাবী ও মা বাঙালি । বাংলার মাটিতে তাঁর জন্ম । বাংলার প্রতি তাঁর টানটাই আলাদা । ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি আগ্রহ ছিল অরিজিতের । আসলে বাড়িতেও ছিল গানের পরিবেশ । পড়াশোনা নয় বরং গানের জন্য স্কলারশিপ পেয়েছিলেন অরিজিৎ । এরপরই ক্লাসিক্যাল গানের চর্চা শুরু । ২০০৫ সালে রিয়েলিটি শো ফেম গুরুকুলে তাঁর প্রথম আত্মপ্রকাশ । না, সেরা হতে পারেননি । বরং, সেইসময় বিচারকদের মন সেভাবে জয় করতে পারেননি । প্রশংসার বদলে বারবার শুনেছেন সমালোচনা । কিন্তু, আজ সেই অরিজিৎ-এই মুগ্ধ আট থেকে আশি ।
অরিজিৎ থেমে থাকেননি । ফিনিক্স পাখির মতো আবার ফিরে এসেছিলেন । তাই তো গায়কি-র জন্য জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছতে তাঁর সময় লাগেনি। ‘মার্ডার’ ছবির ‘ফির মহব্বত’ গানটি গেয়ে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যান। বলিউডি কেরিয়ারের একেবারে প্রথম দিকে 'আশিকি ২' এর টাইটেল ট্র্যাক দিয়ে মন জয় করে নিয়েছিলেন অরিজিৎ । তারপর আর তাঁকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি । লাল ইস্ক, আয়াত, মুসখুরানেকি ওয়াজা, সামঝাওয়া, আগার তুম সাথ হো থেকে সাম্প্রতিক গান 'ঝুমে জো পাঠান' দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছে । বলিউডের পাশাপাশি বাংলাকেও একের পর এক হিট গান উপহার দিয়েছেন । ঝুলিতে ভরেছেন একটি জাতীয় পুরষ্কার, একাধিক ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড ।
ব্যক্তিগত জীবনেও রয়েছে অনেক ওঠা-পড়া । গায়কের প্রথম বিয়ে টেকেনি । প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের পর ২০১২ সালে বান্ধবী কোয়েলকে বিয়ে করেন অরিজিৎ । বর্তমানে দুই সন্তানের বাবা অরিজিৎ ।
মাটির সঙ্গে দোস্তি রেখেই চলতে পছন্দ করেন অরিজিৎ সিং। সারা বিশ্ব তাঁর গানে বুঁদ ,তাঁর কনসার্টের টিকিট খইয়ের মতো উড়ে যায়। কিন্তু আকাশছোঁয়া সাফল্যেও অহংকার ছুঁতে পারেনি অরিজিৎকে। বরাবরই তিনি তারকা থেকে সাধারণ মানুষ হয়ে থাকতেই বেশি পছন্দ করেন। শিকড়ের প্রতি তাঁর অমোঘ টান। বলিউড-টলিউডের একেবারে প্রথমসারির গায়ক হয়েও অরিজিতের পা বরাবর মাটিতে। তাইতো শত ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি ছুটে আসেন মুম্বই থেকে জিয়াগঞ্জে । একেবারে পাড়ার ছেলের মতোই কখনও পাড়ায় স্কুটি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কখনও
পাড়ায় আড্ডা মারছেন, আবার ছেলের স্কুলের সামনে বাবার ঠায় দাঁড়িয়ে থাকার ছবি ভাইরাল হয়েছিল নেটপাড়ায়। সমাজসেবাও করেন অরিজিৎ । জিয়াগঞ্জের জন্য তাঁর অনেক চিন্তা-ভাবনাও রয়েছে ।
এডিটরজি বাংলার তরফ থেকে অরিজিৎ সিংকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা ।