সিনেমা তো করেন, কিন্তু অভিনয়টা পারেন না । সংলাপ তো দূর বাংলায় কথা বলতে গেলেই আটকে যায় । তোতলা । আমরা নয়, তাঁর সম্পর্কে এমনটা অনেকেই বলেন । তবুও তিনি সুপারস্টার । কমার্শিয়াল সিনেমার সুপারহিরো । মাস ঘরানা সিনেমার কিং । একগুচ্ছ ব্লকবাস্টার সিনেমা উপহার দিয়েছেন টলিউডকে । বলিউডের কিং যদি হয় শাহরুখ, তাহলে টলিউডের 'রাজা' তিনি । হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন, কথা হচ্ছে দেব-কে নিয়ে । আজ নায়কের 'বড়দিন'। ৪২-এ রংবাজ । হ্যাপি বার্থ ডে দেব ।
২০২৪-এর জন্মদিনটা একটু বেশিই স্পেশ্যাল দেবের জন্য । কারণ, খাদান-এর সাফল্য । মুক্তির পরই সব রেকর্ড ভেঙে দিচ্ছে এই সিনেমা । পুরনো দেবকে দেখতে হলমুখী আট থেকে আশির দর্শক । সবার মুখে একটাই কথা, 'বাপ এসেছে' ।
টলিউডের আজকের সুপারস্টার কিন্তু বেড়ে উঠেছেন বস্তিতে । কেশপুরের ছোট্ট গ্রামের ছেলেটাকে সবাই চিনত রাজু নামে । স্কুলে দীপক অধিকারী । ১২ বছর বয়স পর্যন্ত গ্রামে মামারবাড়িতেই কেটেছে । তারপর ঠিকানা বদলে মায়ানগরী । মুম্বইয়ে ক্যাটারিংয়ের ব্যবসা ছিল বাবা গুরুদাস অধিকারীর । বড় বড় প্রোডাকশন হাইজেও যেতে তাঁদের ক্যাটারিংয়ের খাবার । মাঝে মাঝে খাবার পৌঁছে দিতে শুটিং সেটে যেতেন । খাবার পরিবেশন করতেন দেব । প্লেট পরিষ্কারও করতে হত । দেব একবার জানিয়েছিলেন, তিনি সেই ছেলে যাঁকে একসময় সঞ্জয় দত্তের গাড়ির ড্রাইভার ধমক দিয়েছিল। সঞ্জয়ের BMW গাড়িটা ছুঁয়ে দেখেছিলেন, এটাই তাঁর অপরাধ । কিন্তু আজ সেই ছেলেটার কাছে গাড়ির কমতি নেই ।
সিনেমার হিরো হওয়ার স্বপ্ন ছোট থেকেই । মনে মনে স্বপ্ন দেখতেন, তিনিও কোনও দিন এভাবেই হিরোর মত ডায়লগ বলবেন, অ্যাকশন করবেন । তবে, শুধু যে স্বপ্ন দেখেছেন তা নয়, স্বপ্নপূরণের জন্য যা প্রয়োজন তাই করেছেন । অভিনয়ের কোর্স করেছেন । মাটি কামড়ে পড়ে থেকেছেন । সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজু, দীপক থেকে হয়ে উঠেছেন দেব ।
শুরুটা হয়েছিল অগ্নিশপথ দিয়ে । সালটা ২০০৫ । প্রথম ছবি ফ্লপ । তবে তার আগে অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন 'টারজান দ্য ওয়ান্ডার কার'-এ । কিন্তু প্রথম অভিনীতি ছবি ফ্লপ হওয়ার পর মুম্বইয়ে ফিরে যাবেন ভেবেছিলেন দেব । কিন্তু, ফেরেননি । মাটি কামড়ে পড়েছিলেন । তারই ফসল আই লভ ইউ । তবে তারপর এক বছর আর সিনেমা করেননি দেব । মুম্বইয়ে ফিরে যান । নিজেকে আরও আপডেট করে বাংলা সিনেমায় কামব্যাক করেন । টলিউড পেল চ্যালেঞ্জ আর সুপারস্টার দেবকে । বাকিটা ইতিহাস । পরাণ যায় জ্বলিয়া রে, পাগলু, রোমিও, খোকাবাবু, রংবাজ...একের পর এক সিনেমা ব্লকবাস্টার । কিন্তু, বারবার তাঁকে শুনতে হল একটাই কথা দেব অভিনয় পারেন না ।
২০১৯ থেকে সিনেমার ঘরানা বদলাতে শুরু করলেন । শুরুটা করলেন সাঁঝবাতি দিয়ে । তারপর একে একে গোলন্দাজ, টনিক, প্রজাপতি, ব্যোমকেশ ও দুর্গ রহস্য,বাঘাযতীন,প্রধান,টেক্কা ...নিজেকে প্রমাণ করেছেন বারবার । বারবার নিজেকে ভেঙেছেন. তাইতো চ্যালেঞ্জের দেব থেকে হয়ে উঠতে পেরেছেন ব্যোমকেশের দেব ।
তবে, দর্শকরা কিন্তু কমার্শিয়াল দেবের প্রেমেই পড়েছে বারবার । চ্যালেঞ্জে তাঁর সেই এন্ট্রি আজও ভুলতে পারেননি দেবভক্ত থেকে বাংলার সিনেপ্রমীরা । সেই পুরনো দেব এবার ফিরে এলেন খাদান-এর শ্যাম হয়ে । শুধু অভিনয়ই করলেন না, সিনেমার ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর থেকে প্রযোজক...এক সিনেমার একাধিক ভূমিকায় দেব । আবারও প্রমাণ করলেন, তিনিই রাজার রাজা, সবার বাপ ।
দেব শুধু অভিনেতা নন, রাজনীতিবিদও । কিন্তু, খাদান-এর আবহে আজ না হয় রাজনীতির কথা তোলাই থাকল, অভিনেতা দেবকে এডিটরজি বাংলার তরফে জন্মদিনের শুভেচ্ছা ।