দীপাবলির পর থেকেই ফি বছর দিল্লিতে দূষণের মাত্রা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। চলতি বছরেও তার ব্যতিক্রম নয়। ইতিমধ্যে এয়ার কোয়ালিটি ইন্ডেক্স বা AQI 400 পেরিয়ে গিয়েছে। যার ফলে দিল্লিতে বসবাসকারীদের শারীরিক অবস্থা প্রশ্ন চিহ্নের মুখে দাঁড়িয়। সম্প্রতি একটি রিপোর্টে প্রকাশ বায়ু দূষণের জন্য গোটা দেশে প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। কিন্তু প্রতিবছর দিল্লিতে বায়ুদূষণের কারণ কী? কেন AQI বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছে যায়?
দিল্লিতে বায়ু দূষণের কারণ কী?
প্রতিবছরই শীতের শুরুতেই বায়ুদূষণের সাক্ষী থাকেন দিল্লিবাসী। এর জন্য দুটি কারণকেই দায়ী করছেন পরিবেশবিদরা। প্রথমত, মাটির খুব কাছে ঠান্ডা বাতাসের একটি স্তর তৈরি হয়। যার ফলে প্রচুর গাড়ি থেকে নির্গত ধোঁয়ার দূষণ সেই স্তরে আটকে যায়। যার ফলে গোটা এলাকা ধোঁয়াটে হয়ে যায়। এবং শীতের শুরুতে হাওয়ার গতিবেগ তুলনায় অনেক কম থাকে। সেই কারণে ওই ধোঁয়াটে বাতাস প্রবাহিত হতে অনেক সময় লাগে।
দ্বিতীয়ত, দিল্লির পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিভিন্ন ফসল তোলার পর শুকিয়ে যাওয়া গাছের অংশ পুড়িয়ে দেওয়া দেওয়া। সেখানকার ধোঁয়া দিল্লিতে পৌঁছে বায়ু দূষণের সৃষ্টি করে।
যদিও এবারের চিত্রটা কিছুটা হলেও ভিন্ন। বিভিন্ন তথ্য ও পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরে পঞ্জাবের কৃষকদের দ্বারা ফসলের খড় পোড়ানোর ঘটনা হ্রাস পেয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। তারপরও দূষণের মাত্রা কমানো সম্ভব হয়নি।
সংবাদ সংস্থা PTI এর একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত পঞ্জাবে খড় পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে ১৯৯৫টি। অন্যদিকে পঞ্জাবের রিমোট সেন্সিং সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, গতবছর এই সময় খড় পোড়ানোর সংখ্যা ছিল ৪০৫৯।
PIB-র প্রকাশ করা দিল্লির বায়ুদূষণের সংক্রান্ত একটি রিপোর্টে প্রকাশ ফি বছরই, নভেম্বর মাসে দিল্লিতে দূষণের মাত্রা সর্বোচ্চ পৌছয়। এবং ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে দূষণের মাত্রা কমতে থাকে।
সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট-এর একটি গবেষণায় প্রকাশ, চলতি বছরের ১২ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত দূষণের সবথেকে বড় কারণ বিভিন্ন গাড়ি থেকে নির্গত ধোঁয়া। মোট দূষণের ৫১,৫ শতাংশ দায়ী এই কারণেই, এছাড়াও পাশের রাজ্য থেকে দূষণ হয়েছে ৩৪.৯৭ শতাংশ, ফসল পোড়া থেকে দূষণ হয়েছে ৮.১৯ শতাংশ এবং দূষণে ডাস্ট পার্টিক্যালের পরিমাণ ৩.৭ শতাংশ।
বায়ুদূষণের ফলে সমস্যা-
বায়ু দূষণের ফলে বিমান চলাচলে ব্যাপক সমস্যা তৈরি হয়েছে। ইন্ডিগোর তরফে জানানো হয়েছে, বায়ু দূষণের ফলে ভিজিবিলিটি কমে গিয়েছে। সেই কারণে বিমান চলাচলেও সমস্যা তৈরি হয়েছে। IGI বিমানবন্দর থেকে প্রায় ১৬০ টিরও বেশি উড়ান সকাল ৮টার আগে উড়তে পারেনি। ৭টি বিমান বাতিল করা হয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরেই দিল্লির বিভিন্ন এলাকা দূষণে ভরে গিয়েছে। তবে সোমবার পরিস্থিতি খুব খারাপ অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছে। একাধিক স্কুল ছুটি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সংস্থা সাময়িক WFH চালু করেছে। দূষণ কমাতে জল ছড়ানো হচ্ছে সকাল থেকে। এছাড়া দূষণ ছড়াতে পারে এমন কাজও বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।