বুলডোজার নীতি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বড়সড় ধাক্কা খেল উত্তরপ্রদেশ সরকার। বুধবার একটি মামলার শুনানিতে দেশের শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, বুলডোজার দিয়ে কারও বাড়ি ভেঙে ফেলা সম্পূর্ণ বেআইনি। এমনকি সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, পুলিশ-প্রশাসন কাউকে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি দিতে পারেনা।
কী ঘটেছে?
ক্ষমতায় আসার পর বেশ কিছু দাগী আসামীদের বাড়ি ভেঙে দিয়েছিল যোগী সরকার। এমনকি, বেআইনিভাবে গড়ে ওঠা বাড়ি ও অন্য স্থাবর সম্পত্তিও সেই তালিকা থেকে বাদ যায়নি। এই পরিস্থিতিতে যোগী সরকারের এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। ওই মামলার শুনানিতেই এবার কড়া নির্দেশ বিচারপতি বি আর গাওয়াই এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের ডিভিশন বেঞ্চের। ওই বেঞ্চ জানিয়েছে, এই ধরনের পদক্ষেপ সংবিধান বিরোধী। সেই কারণে এটা কখনই করা যায় না।
কবে থেকে বুলডোজার নীতি শুরু?
২০২০ সাল থেকে উত্তরপ্রদেশে বুলডোজার নীতি শুরু হয়। আটজন পুলিশকর্মীকে খুনের অভিযোগ উঠেছিল গ্যাংস্টার বিকাশ দুবের বিরুদ্ধে। ২০২০ সালের ৯ জুলাই মধ্যপ্রদেশ থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তারপর কড়া শাস্তির দাওয়াই দিতে, সেই বছরই উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন বিকাশের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে সম্পূর্ণভাবে গুঁড়িয়ে দেয়। সেই থেকেই বুলডোজার নীতি শুরু।
এরপর এই ধরনের একাধিক ঘটনার সাক্ষী থেকেছে রাম জন্মভূমি। বুলডোজার চালিয়ে সম্পূর্ণভাবে বাড়ি ভেঙে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে উত্তরপ্রদেশে। অভিযোগ সেই সব ক্ষেত্রে কোনও লিখিত অনুমতি ছিল না আদালত বা প্রশাসনের।
উত্তরপ্রদেশ রাজনীতিতে দুই পরিচিত নাম মুখতার আনসারি এবং আতিক আহম্মেদ। শুধু রাজনীতি নয়, একাধিক অবৈধ কাজে তাঁদের নাম জড়িয়েছিল। এলাকায় গ্যাংস্টার হিসেবেও পরিচিত ছিল তাঁরা। ২০২৩ সালের ১ এবং ৪ মার্চ ওই দুই গ্যাংস্টারের বাড়ি বুলডোজার চালিয়ে সম্পূর্ণভাবে ভেঙে দেয় যোগী প্রশাসন।
এখানেই শেষ নয়। তালিকা অনেকটাই বড়। চলতি বছরের অক্টোবর মাসে অযোধ্যায় এক ব্যক্তির বেকারি ভেঙে দেয় সেখানকার খাদ্য দফতর। এক ১২ বছরের শিশু কন্যাকে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে ওই বেকারির মালিকের বিরুদ্ধে।
পশ্চিমবঙ্গে বুলডোজার নীতি
উত্তরপ্রদেশ সরকারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে একাধিক সমালোচনা হয়েছিল। কিন্তু তারপর সেই একই সুর শোনা গিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মুখে। কোচবিহারের একটি সভায় তিনি জানিয়েছিলেন, পশ্চিমবঙ্গেও চালু হবে বুলডোজার নীতি।
কী বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট?
চলতি বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি ছিল সুপ্রিম কোর্টে। সেই সময় বলা হয়েছিল, ১ অক্টোবর পর্যন্ত কোনও অভিযুক্তের বাড়ি ভাঙা যাবে না। এবং ১ অক্টোবরের শুনানিতে রায় স্থগিত রাখা হয়েছিল।
বুধবার অর্থাৎ ১৩ নভেম্বর শীর্ষ আদালতে শুনানির সময় বিচারপতিদের বেঞ্চ ভারতীয় সংবিধানের ১৪২ নম্বর ধারার কথা উল্লেখ করে। এবং জানিয়ে দেন এই ধরনের পদক্ষেপ সংবিধান বিরোধী। বাড়ি বা সম্পত্তি ভাঙার ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার লঙ্ঘিত হয়। পাশাপাশি আগামী দিনে সরকারের পক্ষ থেকে এই ধরনের পদক্ষেপ ফের নেওয়া হলে তা আদালত অবমাননা হিসেবে গণ্য় করা হবে।